ঢাকা: তিন প্রকৌশলী ও এক স্কুলশিক্ষকের যৌন কেলেঙ্কানির ঘটনা নিয়ে কুষ্টিয়ায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। এসব ভিডিও ক্লিপিস নিয়ে জেলার বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। আর ঘটনার সঙ্গে দোষীদের বিচারের দাবিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, স্কুলপড়ুয়া একাধিক মেয়ের সঙ্গে আলোচিত যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও ক্লিপস মোবাইল আর ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন সবার হাতে হাতে ছড়িয়ে পড়েছে।
কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়ীয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না তার বাসায় বন্ধুদের নিয়ে গিয়ে গোপন ক্যামেরায় এসব ভিডিও ফুটেজ ধারণ করে রেখে দেন তার ব্যক্তিগত ল্যাপটপে। আর সেখান থেকে তিন প্রকৌশলীসহ কুষ্টিয়ার বেশ কয়েকজনের অনৈতিক জগতের এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় যুবকরা এক ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নার ছবি দেখে তাকে আটক করে মারধর করে। এক পর্যায়ে তার ল্যাপটপ কেড়ে নিয়ে তা থেকে একাধিক ভিডিও ক্লিপস উদ্ধার করে। সে সময় তাকে ছেড়ে দেয়ার পর ওই শিক্ষক বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এদিকে, ওই তিন প্রকৌশলী ও শিক্ষকের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কুষ্টিয়ায় সম্প্রতি বিক্ষোভ মিছিল করেছে এলাকাবাসী। তারা বেশ কয়েকটি যানবাহনও ভাঙচুর করে। এছাড়া বিচারের দাবি জানিয়ে এলাকায় সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে টাঙানো হয়েছে পোস্টার। ছাড়া হয়েছে লিফলেট।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার মঙ্গলবাড়ীয়া আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্না প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার প্রতিষ্ঠানের অনেক ছাত্রীর সঙ্গে মিলনের দৃশ্য গোপনে ভিডি করেন।
এমনই এক ঘটনায় গত ১৫ জুন এক ছাত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে তোলা ছবির সূত্র ধরে স্থানীয়রা বিদ্যালয়েই শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নাকে মারধর করে। মধ্যস্থতায় যুবকরা তাকে ছেড়ে দিলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ রেখে দেয়। আর এই ল্যাপটপের সূত্র ধরেই বেরিয়ে আসে আলোচিত ব্যক্তিদের এসব যৌন কেলেঙ্কারির একাধিক ঘটনা।
সূত্র জানায়, পান্না কুষ্টিয়া শহরতলীর জুগিয়া এলাকার একটি বাসা ভাড়া নিয়ে গোপন ক্যামেরায় এসব মিলনের দৃশ্য ভিডিও করেন। এছাড়া তিনি সেখানে তার বন্ধুদের নিয়েও এই অনৈতিক কাজ করার সুযোগ করে দেন এবং গোপনে তা ক্যামেরা বন্দি করেন। হেলাল উদ্দিন পান্নার ল্যাপটপে এ ধরনের ৯টি ভিডিও ক্লিপসের দুটি রয়েছে শিক্ষক পান্নার সঙ্গে তার বিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীর মিলনদৃশ্য।
এছাড়া লাপটপ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-প্রধান প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুলের সঙ্গে দুজন ছাত্রীর মেলামেশার ভিডিও উদ্ধার করা হয়েছে। এর একটিতে দেখা যায়, ওই ছাত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে মিলনে বাধ্য করেন প্রকৌশলী আলিমুজ্জামান টুটুল।
ল্যাপটপ থেকে তিনি ছাড়াও আরো তিনজনের যৌন মিলনের ভিডিও ক্লিপস উদ্ধার করা হয়। এসব ফুটেজ থেকে স্থানীয়রা মেহেরপুর এলজিইডিতে কমর্রত উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাসানুজ্জামান হাসান, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার শরিফুল ইসলাম সজলের যৌন মিলনের দৃশ্য, হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা মনিরুল ইসলাম মনোকে সনাক্ত করেছেন।
তবে এদের তিনজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
ঘটনার নায়ক স্কুলশিক্ষক পান্না এবং ওই তিন ইঞ্জিনিয়ার টুটুল, সজল ও হাসানের প্রত্যেকের বাড়িই কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নে।
তবে আলিমুজ্জামান টুটুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ‘তার সরলতার সুযোগে কৌশলে কেউ তাকে ব্লাকমেইলিং করা হয়েছে।’
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার ভুল হয়ে গেছে। আমাকে ক্ষমা করে দেন।’
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ ধরনের বেশ কিছু ভিডিও ক্লিপস আমার হাতেও এসেছে। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগী কোনো ছাত্রী বা অভিভাবক লিখিত অভিযোগ এখনো করেননি।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও পুলিশ ঘটনার মূল নায়ক শিক্ষক হেলাল উদ্দিন পান্নাকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় অভিযান অব্যাহত রেখেছে।’
Tidak ada komentar: ৩ প্রকৌশলী-এক শিক্ষকের ভিডিও ক্লিপস, তোলপাড় কুষ্টিয়া
Posting Komentar