বহুল আলোচিত বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই ```তসলিমা নাসরিন`` একটি বিতর্কিত নাম। প্রগতিশীল কিছু মানুষদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন। ভূয়সী প্রশংসার পর প্রশংসা করলেও হয়তো তারা কম বলবে, বরং উল্টা আমাকে নিন্দুক ঠাওরাবে। সে বিষয় অস্বীকার কিংবা সন্দেহ করা`র অবকাশ নেই। একজন শুভকাঙ্খি বন্ধু, তার এক সাবলীল প্রশ্ন উত্তরে বলেছিলাম- ``তসলিমা নাসরিন`` আর দশটা মেয়ের মতন সাবলীল জীবন যাপন করতে`ই বা যাবেন কেনো? জীবন যার যার, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য বোধ সব মানুষের আছে, সে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করবে, তার নিজস্ব ব্যাপার। কিন্তু এখন তার নিজের জীবন আর ব্যক্তিগত নয়, প্রগতিশীল কিছু মানুষের বড় একটা অংশ। তাই তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সব ধরনের পাঠক সে অধিকার রাখে। কথা হচ্ছে, যখন কেউ প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম নিয়ে কথা বলে দেখতে হবে তখন সে দলবদ্ধতার বৃত্তের বাইরে থেকে নিজের চিন্তার দর্শন কর্মে নিজের বাস্তব জীবনে ষোলআনা ভাঙ্গতে পেরেছেন কিনা? চিন্তার দর্শনে অনেক কিছু`ই বলা সহজ, বাস্তব জীবনে প্রয়োগ কঠিন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিশেষ করে বাঙ্গালী সমাজে একজন সত্তর বছর বয়সী পুরুষও একটি আঠারো বছর মেয়ে`র সাথে প্রেম, বিয়ে, যৌন সম্পর্ক অনায়াসে স্থাপন করতে পারেন। কিন্তু একজন চল্লিশের উপরে একজন বাঙ্গালী নারী কী বিশ বছরের যুবকের সাথে প্রেম, বিয়ে, যৌন সম্পর্ক অনায়াসে আদৌ স্থাপন করতে পারেন?
বাঙ্গালী অসম বয়সী নারী স্বেচ্ছায় সম্পর্ক স্থাপন করতে যেও রীতিমত এক ধরনের মানসিক হীনমন্যতায় ভুগেন সম্প্রতি ``তসলিমা নাসরিন`` ``প্রেম-ট্রেম`` শিরোনামে দিয়ে তার নিজের ব্লগে আত্ম সমালোচনা মূলক একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন`` সেখানে ``তসলিমা নাসরিন`` ``ডেভিড`` নামের এক বেলিজ বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন যুবকের সঙ্গে প্রেম করার জন্য পারফেক্ট একটা ছেলে পেয়েছিলেন, কিন্তু পেলে কী হবে? তিনি চুকচুকিয়ে বললেন, ``ওর বয়স সাতাশ। আমার হাঁটুর বয়সী। বয়সটা শুনে প্রেমের উদ্রেক হওয়ার বদলে একটুখানি স্নেহের উদ্রেক হল। এখানেই পুরুষের মতো হতে পারি না। না পারার পেছনে কতটা আমি আর কতটা সমাজের মরালীটি লেশন, তা মাপা হয়নি`` তবে আর তিনি প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম কতটুকু ভাঙ্গতে পারলেন কিংবা অতিক্রম করতে পারলেন প্রশ্ন থেকে যায়। ``ডেভিড`` নামক ছেলে কে প্রত্যাখ্যান করা বা তাঁর প্রতি মায়া প্রদর্শনে এক নিমিষে`ই বলা-বাহুল্য এক গামলা দুধের মধ্যে একফোঁটা প্রস্রাব তার সমস্ত পরিশ্রমকে পণ্ডশ্রমে পরিণত করে। তাতে, হাস্যরস কৌতুক কতটা যুক্তি সঙ্গত?
বলে রাখি, চিন্তার দর্শনের ক্ষেত্রে বাস্তব প্রয়োগের বাধ্যবাধকতা সব চেয়ে বেশি জরুরী, রুচি`র ক্ষেত্রে মন মননশীলতায় ঐচ্ছিক থেকেও অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। যেটা, প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম নীতি না মানলেও চলে। শুধু রুচি`র ব্যাপারটি দিয়ে`ই প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম আয়ত্ত কিংবা বরখাস্ত অধিকাংশ সময়ই করানো যায়। কিন্তু তথা কথিত প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়ম ভাঙ্গার মোক্ষম কৌশলের ধনুকের বানটা হলো দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ, প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে না গ্রহণ যোগ্য হলেও অন্তত নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে মনে হবে। এবং নিজের জীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্যকে বলতে হবে। তা না হলে, সেও হবে দর্শনের কথার ফুল ঝড়িয়ে উলু-বনে মুক্তা ছড়ানোর মত আত্ম প্রতারক, আত্ম প্রবঞ্চক তার চেয়ে বরং আত্মঘাতী হওয়া অনেক সুবিধার `তসলিমা নাসরিনের`` মত করে, প্রথা সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তন আমরা চাই, তবে বাস্তব বিবর্জিত নয়, বাস্তব সম্মত।
প্রসঙ্গক্রমে, আবার সেই শুভকাঙ্খি বন্ধুটি বলল- ``তসলিমার প্রথম প্রেম ছিল রুদ্র, এরপর আরও অনেক পুরুষ তসলিমার নাসরিনের জীবনে এসেছে । এমন কি, তসলিমা গে, লেসবিয়ান এদের সাথে ও সহবাস করেছেন।`` মানুষের যৌন স্বেচ্ছাচারিতা আর বিভিন্ন খাবারের পদের রুচি-বোধ প্রায় নিকট সম আত্মীয়। নিশ্চয় তা প্রেম নয়, প্রেম কী ছেলে`র হাতে মোয়া? কিন্তু বিপরীত লিঙ্গ, সমকামী, উভ-কামী, গে, লেসবিয়ান সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? যৌনতার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রচলিত বিজ্ঞানের তত্ত্ব বলে, পৃথিবীর আদি এবং অন্তে মূলত সমকামী-বি-সমকামী বলে কোনো নির্ধারিত এবং নিদিষ্ট সীমা রেখা নেই। নারী পুরুষ সকলের মধ্যেই লেসবিয়ান, গে, এবং রুপান্তর-কামী লিঙ্গ পরিবর্তন অসম আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। হোমোসেক্সুয়াল বনাম হেটেরোসেক্সুয়ালের দ্বিমেরু করণ বিভাজন ধারাবাহিকতা নিতান্তই অর্বাচীন। শুধু ``তসলিমা নাসরিন`` কেনো? প্রতিটা মানুষ তার নিজের শরীরকে পর্যন্ত অদম্য ভালোবাসে সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষের স্ব-মৈথুন প্রকৃত উদাহরণ নয় কী?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ``তসলিমা নাসরিন`` রুদ্র থেকে শুরু করে অনেক পুরুষের হাত ঘুরে এমন কী (বন্ধু`র কথায়) গে, লেসবিয়ানদের সাথে সহবাস করেছেন, বলার অপেক্ষা রাখে না, তিনি বিষম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, পুরুষতান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক, মাতৃ-তান্ত্রিক সব ধরনের প্রথা সমাজ সংস্কৃতি`র অবকাঠামো থেকে, নিজের শরীর মন থেকে প্রচলিত তথা কথিত ধ্যান ধারনা থেকে অবমুক্ত করতে পেরেছেন, প্রশংসার যোগ্য, জীবনে`র এতটা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, এতটা সাহসিকতা`র পরিচয় দিয়ে তিনি কেনো সেই সাতাশ বছর বয়সী বেলিজ বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন যুবকের দোর গোঁড়ায় এসে থেমে গেলেন? তিনি নিজে`ই বলছেন- `` ওর বয়স সাতাশ। আমার হাঁটুর বয়সী। এখানেই পুরুষের মতো হতে পারি না।`` তবে কী সাতাশ বছর বয়সী যুবকের কাছে এলে তার নারীবাদী পঞ্চ ইন্দ্রিয় বোধ জেগে উঠে? নাকি মাতৃত্ব? রুচি-বোধ? পড়ন্ত বেলার শিথিল যৌবন? নাকি শেষ অবধি নিজেও ঐ প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়মের বোধের কাছে আটকে গেলেন? যার জন্য তিনি সারা জীবন যৌবন দিয়ে সংগ্রাম করলেন, একের পর এক রক্ষণশীলতার দেয়াল ভাঙ্গলেন, পড়ন্ত বেলার শিথিল যৌবনে এসে নিজের ভেতরের রক্ষণশীলতার দেয়াল`টা ভাঙ্গতে পারলেন না? ভাঙ্গার প্রয়োজন ছিল, নারীবাদী`রা আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতো। কেউ পড়ে শিখে, কেউ দেখে শিখে। আমাদের অবলা মূর্খ নারী`রা পড়ে শেখার সুযোগ কালক্রমে ভাগ্য গুনে পায়। অন্তত ``তসলিমা নাসরিন``র দেখানো পথ অনুসরণ করে, দেখে শেখার সাহসিকতাটুকু দেখাতে পারতো। এবার বোধয় আমাদের অবলা মূর্খ নারী`দের ``তসলিমা নাসরিন`` হতাশ করলেন, বঞ্চিত করলেন।
বন্ধুর সাথে কথা প্রসঙ্গে, ``তসলিমা নাসরিনে``র সেই `ডেভিড`` নামের বেলিজ বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন যুবকের কথা উঠতে`ই শুভকাঙ্খি বন্ধুটি বলল- কম বয়সী পুরুষ আর বেশি বয়সী নারীর সম্পর্ক বিয়ে হয়নি এ কথা আপনাকে কে বলল ? এ রকম দৃষ্টান্ত তো অনেকই আছে। সম্ভব নয়, হয় না, এ কথা ঠিক নয়। বেশি দূর যেতে হবে না, মহানবী এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে। শুধু অতীত নয় বর্তমানেও এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। একটু চোখ মেলে দেখুন এরকম দৃষ্টান্ত এ বাংলাতেও আছে ।
বন্ধুটি, যখন আমাকে ``মহানবী`র`` উদাহরণ দিলেন, তাকে বলেছিলাম- মহানবী`র উদাহরণ, যতটা না অসম তার থেকে বেশি বৈষয়িক, নিরাপত্তা-জনিত এবং কৌশলের। এবং তার জীবনের পরবর্তী খতিয়ান`গুলো আরও মারাত্মক বিব্রতকর। আরব বিশ্বে যতদূর জানি, নারী পুরুষের অসম বিয়ে গুলো হয় অর্থনৈতিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে এবং অসম বয়সে ভীমরতি ও ছ্যাবলামো করার জন্য, যৌনতা কিংবা প্রেম নয়। অসম বিয়ের মধ্যে বয়স্ক-জন মারা গেলে প্রবর্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি মালিক হওয়ার লোভে পড়েই অসম বিয়ে`গুলো এখানে প্ররোচিত হয়ে থাকে। অসম বিয়ে, প্রেম, যৌনতার ক্ষেত্রে এটাই আরব বিশ্বের জন্য বাস্তব সত্য।
আমার কথাটি বন্ধুর মনে ধরেনি, তিনি আমাকে বোধয় একটা বোয়াল মাছে`র ভেটকি`ই দিলেন তার নিজের প্রত্যুত্তরে। কিন্তু বন্ধুটি যেহেতু ``মহানবীর`` উদাহরণ টেনে ধরেছেন, তার অবগতির জন্য আর একটু বলেছিলাম, তা হলে কেনো ইসলামি সংস্কৃতির মূল্য বোধে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এবং অনন্য ইসলামী সংস্কৃতি মূল্যবোধের প্রাসঙ্গিক মুসলিম জনপ্রিয় আচার লৌকিকতার মতন বয়স্ক নারী`র অসম, প্রেম, বিয়ে, যৌনতা সমান জন প্রিয়তা না পেয়ে বৈষম্য পীড়িত হলো কেনো? (শ্রেণী বিন্যাসের বৈষম্যের কথা না, হয় বাদেই দিলাম)। ইসলামী সংস্কৃতি মূল্যবোধে (সব ধর্মে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধে) বিয়ে করতে গেলে পুরুষ (পাত্র) পক্ষ কম বয়সী নারী`র নির্বাচিত করার জন্য সামাজিক স্বীকৃতির তাগিদ অনুভব করে না, অনায়াসে পেয়ে যায়, তার বিপরীতে নারী` ক্ষেত্রে বরং উল্টা, আজ পর্যন্ত দেখিনি, ইসলামে নারী বিয়ে করার জন্য কম বয়সী পুরুষ সঙ্গিনী নির্বাচনে সামাজিক স্বীকৃতির তাগিদ অনুভব করেছে কী? সেক্ষেত্রে বৈষম্য পীড়িত না হয়ে অসম নারী`র পুরুষ সঙ্গিনী নির্বাচনে ``মহানবীর`` সমান দৃষ্টি ভঙ্গির তাগিদ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না? এমন নয় যে, বিষয়টা তিনি জানতেন না? তিনি নিজে খাদিজা`কে ভোগ দখল(অসম বিয়ে)করলেন, এবং তারেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রভাব বলে, নারীকেও তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে হস্তগত করলেন। সেই থেকে নারী ধর্মীয় আভরণে পরুষের কাছে, নারী শুধু ব্যক্তিগত সম্পত্তি, মানুষ না, এবং নিজের পুরুষতান্ত্রিক সুবিধা জিইয়ে রাখা`র জন্য এমন এমন সব নৈতিক বিবর্জিত কর্মের অনুমোদন নারী`র উপর চাপিয়ে দিয়ে গেলেন, মৃত্যু শয্যাশায়ী মুমূর্ষ রোগী`র মত নারী আজও সে যন্ত্রণা ভোগ করছে।
নারীকে পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ভাবার যদেষ্ট কারণ পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এটা হচ্ছে ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে নারী করে রাখার পুরুষতান্ত্রিক মগজের কৌশল। এবং যেখানে ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষণশীলতা বেশি, সেখানে পুরুষতান্ত্রিক মগজের কৌশলের স্থায়িত্ব বেশি। তাই নারীকে মানুষ হয়ে উঠবার জন্য উন্নত জ্ঞানময় সমাজ ব্যবস্থায় বিকল্প নেই। একটি উন্নত জ্ঞানময় সমাজ ব্যবস্থায় দিকে ব্যক্তি পরিবার সমাজ যতদিন হেটে না যাছে, ততদিন পর্যন্ত নারীকে মানুষ হিসাবে পুরুষতান্ত্রিক মগজ স্বীকৃত দেবে না। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মগজ কৌশল অবলম্বনের দিকে নারীকে নিয়ে দাড় করিয়ে দিচ্ছে পুঁজিবাদ বিপণনের দিকে, সেখানে গিয়েও নারী একই পুরুষতান্ত্রিক মগজের বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে আরও ভয়াবহ ভাবে। ব্যক্তি মালিকাধীন সম্পত্তি পরিবার ধর্মীয় প্রথার বিরুদ্ধে যতদিন পর্যন্ত না স্বয়ং নারী বিদ্রোহ করছে, ততদিন পর্যন্ত নারীকে মানুষ হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তবে হ্যাঁ, দেশ, কাল সংস্কৃতির রুচি-বোধে ধর্মের অস্বাভাবিক সামাজিক স্বীকৃতি পরিত্যক্ত করে নাগরিক অধিকার বোধ রক্ষার তাগিদে নারী`র অসম প্রেম বিয়ে যৌনতা এখন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। সম্প্রতি ৪৫ বছর বয়সী মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী ``জেনিফার লোপেজ`` তার চেয়ে বয়সে ২০ বছরের ছোট প্রেমিক ``ক্যাসপার স্মার্ট``কে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। নারী`র অসম প্রেম বিয়ে যৌনতার ক্ষেত্রে তা একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সন্দেহ নেই। তবুও নাকি, চরম অনিশ্চয়তায় ভুগেন ``জেনিফার লোপেজ``। তার কারণ অনেক রকম হতে পারে। সব ধরনের সম্পর্কে টানাপোড়নে-র অনিশ্চয়তা একটা না একটা থাকেই, নারী, পুরুষ, লিঙ্গ নির্বিশেষে। কিন্তু বাঙ্গালী নারীর মত মানসিক হীনমন্যতায় ভোগেনি। নিজের সম্পর্কে ``জেনিফার লোপেজ`` বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ওকে বলি, “কেন তুমি কমবয়সী এক সঙ্গী জোগাড় করে চলে যাচ্ছ না? আমার কাছ থেকে তুমি কী চাও?” তবে সত্যিটা হলো আমরা কেউই জানি না ভবিষ্যতে কী হবে? বর্তমান সময়টা আমরা উপভোগ করছি।’
আরব বিশ্বে শুধু কী তাই? আরব বিশ্বে এখনো নিজের নামের সাথে পিতৃ পরিচয়ের সাথে দাদা`র নাম কিংবা স্বামী`র নামের সাথে শ্বশুরের নামটিও বহন করতে হয়। মোটা দাগে- একটা নামের সাথে জীবিত কিংবা মৃত তিনটা নাম একজন জীবিত মানুষকে বহন করতে হয়। পদে পদে এরকম হাজারটা বৈষম্য আরব বিশ্বে বিরাজমান। হতে পারে তা দেশ কাল প্রথা সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে। একজনের কাছে যা ব্যতিক্রম অন্যজনের কাছে তাই স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক যেটা, প্রায় সব দেশেই `ধর্মের সাথে অন্তর্দেশীয় লৌকিক আচার অনুষ্ঠানের সংস্কৃতির পরস্পর বিরোধী সংঘাত বিরোধ থাকা সত্ত্বেও, ধর্ম`গুলো ভালো ভাবেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে। দেশে দেশে পীড়ন শাসন শোষণ সুদখোর মহাজনের মত ঢাক ঢোল পিটিয়ে বেশ রুজি-রোজগার করছে।
আর যদি বাংলা`র কথা বলি, নারী পুরুষের অসম প্রেম, বিয়ে, যৌন সম্পর্ক (অসংখ্য নয়) কম বয়সী পুরুষ আর বেশি বয়সী সাধারণ নারীর`দের ক্ষেত্রে দু-চার`টা যা ঘটে, তা ব্যতিক্রম এবং কাকতালীয় তা কিন্তু সমাজের প্রচলিত স্তরের থেকে তার উপরে স্তরে উত্তরণের পৌঁছানোর পরিবর্তনের সূচকের দিক নির্দেশন করে না। প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়ম তার আগের নিয়মে আগের জায়গায় থেকে যায়। প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়মের বিরুদ্ধে গণহারে মানুষের প্রচলিত সমাজ সংস্কৃতি নিয়মের ধ্যান ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে, ধুয়ে মুছে বিলুপ্ত সাধন করে নতুন প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়মে মানুষ মনস্তাত্ত্বিক ভাবে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করে। সেই নতুন প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়মে মানুষ মানুষকে অশ্রাব্য, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কাউকে শুনতে হবে না, নতুন প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়মে ইতর, অসভ্য ও অমানবিক বৈষম্য পীড়িত মানুষ হবে না।
অসংখ্য নয়, খেয়াল করবেন, বহুল কথিত আছে, পুরানো প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়ম দু’চার জনই বদলায়, ধাক্কা দেয়, থাপ্পড় দেয় প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়ম রীতিমতো শীতের কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ``তসলিমা নাসরিন`` তাদের একজন। তবে হ্যাঁ, ``তসলিমা নাসরিন`` যেভাবে নারী জীবনের কথা বলেছেন, তার অনেক লেখা`ই বহুল আলোচিত বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই `তসলিমা নাসরিন` অধিক উচ্চারিত একটি বিতর্কিত নাম। প্রগতিশীল কিছু মানুষদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন। এমনকি আমি নিজেও তার লেখার বিষণ ভক্ত, অনুরক্ত পাঠক। তার মানে এই না, তার সব লেখার মতবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। (পুরুষতান্ত্রিক বা নারীবাদী মনোভাব বাদ দিয়ে) মানুষের সাথে মানুষের মত পার্থক্য থাকতেই পারে, ``তসলিমা নাসরিনের`` নিজের স্বার্থসিদ্ধির কারণে হলেও অন্তত মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কিছু লেখা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এমন সমর্থন যোগ্য। এবং ``তসলিমা নাসরিন`` ভূয়সী প্রশংসার পর প্রশংসার করলেও হয়তো ``তসলিমা-বাদী``রা কম বলবে, বরং উল্টা আমাকে আবারও নিন্দুক ঠাওরাবে, পুরুষতান্ত্রিক বলবে, ছক বাধা ভাবনা আর প্রথাগত যুক্তি বলে পালিয়ে যাবে।
মহানবীর অসম বিয়ের কথায় বৈষয়িক, নিরাপত্তা-জনিত এবং লেনদেনের কৌশলের কথা বলাতে, বন্ধুটি এবার আমাকে বোধয় ক্ষেপে গিয়ে অবশেষে লাল কার্ড দেখিয়ে দিলেন, তার নিজের প্রত্যুত্তরে। - এক জন পুরুষের কম বয়সে বিয়ে করলে সেক্ষেত্রে ব্যবসা লেনদেন, তার জন্য আজব আপনার প্রথাগত যুক্তি ।আপনার ছক বাধা চিন্তা আপনার মাঝে লালন করুন ।অতিক্রম করার প্রসঙ্গ টি ছিল মূলত।আর আলোচনায় যেতে ইচ্ছে নেই এই ছক-বাধা চিন্তা দেখে ।পরবর্তী তে একই যুক্তি অবতারণা করবেন । ধন্যবাদ । ভালো থাকুন ।বিদায় ।
বুঝতে পারলাম, ``তসলিমা নাসরিন`` পড়ে বন্ধুটি অনুকরণ প্রিয় ও সত্যিকার অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। মনস্তাত্ত্বিক ভাবে আগাগোড়া প্রভাবিত ``তসলিমা-বাদী` ভাব শিষ্য হতে পেরেছেন। অন্তত তার লেখা, মন্তব্য, তাই নির্দেশন করে। আমি আগেও বলেছি, তথা কথিত প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়ম ভাঙ্গার মোক্ষম কৌশলের ধনুকের বানটা হলো দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ, প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে না গ্রহণ যোগ্য হলেও অন্তত নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে মনে হবে। এবং নিজের জীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্যকে বলতে হবে। তা না হলে, সেও হবে দর্শনের কথার ফুল ঝড়িয়ে উলু-বনে মুক্তা ছড়ানোর মত আত্ম প্রতারক, আত্ম প্রবঞ্চক, তার চেয়ে বরং আত্মঘাতী হওয়া অনেক সুবিধার। `তসলিমা নাসরিনের`` মত করে, প্রথা সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তন আমরা চাই, তবে বাস্তব বিবর্জিত নয়, বাস্তব সম্মত, ভেঙ্গে, করে, আঙ্গুল উঁচিয়ে রক্ষণশীল চোখের পর্দা সরিয়ে দিতে হবে। নিজে নিদিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব রেখে অন্যকে প্রল্লুদ্ধ করে আগুনের গোলা`র মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলার মধ্যে পণ্ডিত আছে কিন্তু দর্শনের মহত্ব নেই। অন্যের, প্রথাগত ``শাস্ত্রীয়`` দর্শনের মনস্তাত্ত্বিক বোঝা আর ``তসলিমা-বাদী`` মনস্তাত্ত্বিক বোঝা`র দর্শনের মধ্যে তবে আর কী ব্যবধান থাকল?
`তসলিমা নাসরিনের`` খুব কম লেখা আছে যে, আমি পড়িনি। আজকের দিনে বাংলার নারী জাগরণে ``বেগম রোকেয়ার``পর বহুল আলোচিত বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই `তসলিমা নাসরিন`নামটি অধিক উচ্চারিত একটি বিতর্কিত নাম। একথাটি বলা`র যথেষ্ট কারণ আছে `তসলিমা নাসরিনের`` বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই তার নামটি এতো উচ্চারিত এবং বিতর্কিত। লেখার জন্য নয়। কারও লেখা পড়া দোষের কিছু নয়, ভাল মন্দ সবেই পড়া উচিত, বাংলাদেশে`র রাজধানী ঢাকা`র মগবাজারের বাঁশ পট্টি থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের স্ট্যাটফোর্ড-অন-অ্যাভন। বাংলা চটি লেখক ``রসময় গুপ্ত`` থেকে ``শেকসপিয়র``। কারও লেখা ভাল লাগতে পারে, প্রেরণা`র উৎস হতে পারে। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারে। চিন্তার দর্শনকে শান দিতে উৎসাহিত করে। দৃষ্টি ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে পারে। ধীরে ধীরে শম্বুক গতিতে প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসে। ``তসলিমা নাসরিন`` সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। আশার বানী, প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে নিয়মে হয়তো পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বন্ধুটিকে, দিয়ে বুঝি, কিন্তু কারও লেখা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া মানসিক নিপীড়নের বৈকল্য ছাড়া কিছু নয়। অনেকটা রাজনীতিতে যেমন তৃণমূল কর্মীরা প্রভাবশালী নেতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। ব্যাপারটা ঠিক ঐরকম। মানসিক চিন্তার সন্ত্রাসও বলা যেতে পারে। তাতে করে নিজের চিন্তার দর্শন আদেশ নিষেধের মত খর্ব হয়ে পড়ে। লেখা স্ব-প্রণোদিত চিন্তার দর্শন। অনুকরণ প্রিয় না হয়ে অনুশীলন প্রিয় হলে বন্ধুটি লেখায় বেশ ভাল করত। নিজের কল্পিত ছক-হীন দর্শনকে নিজের জীবনের বাস্তব সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে আরও স্বাধীন চেতা আত্ম প্রত্যয়-শীল হয়ে উঠতে পারত। বন্ধুটি হয়তো জানে না- অন্যের ঠোটে`র আভরণ, আঙ্গুলের ছাপ, পায়ের পাতা, হাতের লেখা, চিন্তার দর্শন শত চেষ্টা করে অনুকরণ করা যায় না।
বন্ধুটিকে প্রত্যুত্তরে, বললাম-আপনার লেখায় যতগুলো মন্তব্য দিয়েছি তার সবগুলো`ই প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যায়। ``তসলিমা নাসরিনকে`` ছোট করে, হেয় করে দেখার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই। হয়তো, আপনি বুঝতে অক্ষম, নয়তো আমি আপনাকে বুঝাতে অক্ষম। আমার জ্ঞানের দৌড় বড় সীমিত। আর এসব যদি শুধু`ই প্রথাগত যুক্তি কিংবা ছক বাধা ভাবনা হয়। তবে বলবো, প্রথাগত যুক্তি ও ছক বাধা ভাবনা`র বাইরে যেতে আমাকে আরও কোটি আলোকবর্ষ বেচে থাকতে হবে। নতুবা, অজ্ঞতা নিয়ে এই শূন্য দশকের কোনো এক সময় আমাকে মরে যেতে হবে। কারও যুক্তি বোধ মনে না ধরলে`ই তা প্রথাগত যুক্তি বা ছক বাধা ভাবনা ভেবে সীমা-রেখা`র লাগাম টেনে ধরা`টা বরং অধিক সংকীর্ণ মনের পরিচয় বহন করে। আগাছার মত ভিতর থেকে ভাবনা`র প্রাণ শক্তির নির্যাস শুষে নেয়, দুঃখিত। আর আলোচনায় যেতে ইচ্ছে করছেন না, সেটাও আপনার ইচ্ছে। কেউ আপনাকে মাথার দিব্যি দেয়নি। আর ছক বাধা ভাবনা বা প্রথাগত যুক্তি বলতে কী বুঝালেন, তাও বুঝলাম না। ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
তবে "বেগম রোকেয়া" ও "তসলিমা নাসরিন``কে কতজন নারী অনুকরণ করে তার পরিসংখ্যানের মুখ বন্ধন আমার জানা নেই, আর এই ভাবে কারও পক্ষে পরিসংখ্যানের মুখ বন্ধন দেওয়া সম্ভব নয়। বোধ করি, পাঠক তা জানেন। ``বেগম রোকেয়া`` পর নারী মুক্তি আন্দোলনের জন্য আরো বেশ কয়েকজন মহীয়সী এসেছেন। তাছাড়া ``তসলিমা নাসরিন পড়ে`` কতজন নারী সত্যিকার অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, প্রশ্ন সাপেক্ষ। তারও চেয়ে বড়ো কথা আজকাল আমাদের দেশে দুই শ্রেণীর মানুষ খুব চোখে পড়ে, লিঙ্গ নির্বিশেষে। এরা হয় হুমায়ুন আজাদ হতে চান, নইলে তসলিমা নাসরিন। অথচ প্রথমোক্ত জনকে ধারণ করা কতোটা কঠিন তা বোধহয় তারা চিন্তাও করতে পারেন না। আর নারী পুরুষ সম্পর্ক বা শারীরিক চাহিদা নিয়ে লিখলে বা পুরুষদের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে না হওয়া যায় ``তসলিমা নাসরিন`` না তাতে সমাজের কোনো উপকার ঘটে—এটা বোঝেন না এ জাতীয় বেশীর ভাগ নারীবাদী লেখক``। উপরোক্ত কোড করা কথা`গুলো আমার না, আমার এক পরিচিত নারীবাদী লেখিকার কথা।
বাঙ্গালী অসম বয়সী নারী স্বেচ্ছায় সম্পর্ক স্থাপন করতে যেও রীতিমত এক ধরনের মানসিক হীনমন্যতায় ভুগেন সম্প্রতি ``তসলিমা নাসরিন`` ``প্রেম-ট্রেম`` শিরোনামে দিয়ে তার নিজের ব্লগে আত্ম সমালোচনা মূলক একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন`` সেখানে ``তসলিমা নাসরিন`` ``ডেভিড`` নামের এক বেলিজ বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন যুবকের সঙ্গে প্রেম করার জন্য পারফেক্ট একটা ছেলে পেয়েছিলেন, কিন্তু পেলে কী হবে? তিনি চুকচুকিয়ে বললেন, ``ওর বয়স সাতাশ। আমার হাঁটুর বয়সী। বয়সটা শুনে প্রেমের উদ্রেক হওয়ার বদলে একটুখানি স্নেহের উদ্রেক হল। এখানেই পুরুষের মতো হতে পারি না। না পারার পেছনে কতটা আমি আর কতটা সমাজের মরালীটি লেশন, তা মাপা হয়নি`` তবে আর তিনি প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম কতটুকু ভাঙ্গতে পারলেন কিংবা অতিক্রম করতে পারলেন প্রশ্ন থেকে যায়। ``ডেভিড`` নামক ছেলে কে প্রত্যাখ্যান করা বা তাঁর প্রতি মায়া প্রদর্শনে এক নিমিষে`ই বলা-বাহুল্য এক গামলা দুধের মধ্যে একফোঁটা প্রস্রাব তার সমস্ত পরিশ্রমকে পণ্ডশ্রমে পরিণত করে। তাতে, হাস্যরস কৌতুক কতটা যুক্তি সঙ্গত?
বলে রাখি, চিন্তার দর্শনের ক্ষেত্রে বাস্তব প্রয়োগের বাধ্যবাধকতা সব চেয়ে বেশি জরুরী, রুচি`র ক্ষেত্রে মন মননশীলতায় ঐচ্ছিক থেকেও অনেক কিছু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। যেটা, প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম নীতি না মানলেও চলে। শুধু রুচি`র ব্যাপারটি দিয়ে`ই প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়ম আয়ত্ত কিংবা বরখাস্ত অধিকাংশ সময়ই করানো যায়। কিন্তু তথা কথিত প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়ম ভাঙ্গার মোক্ষম কৌশলের ধনুকের বানটা হলো দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ, প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে না গ্রহণ যোগ্য হলেও অন্তত নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে মনে হবে। এবং নিজের জীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্যকে বলতে হবে। তা না হলে, সেও হবে দর্শনের কথার ফুল ঝড়িয়ে উলু-বনে মুক্তা ছড়ানোর মত আত্ম প্রতারক, আত্ম প্রবঞ্চক তার চেয়ে বরং আত্মঘাতী হওয়া অনেক সুবিধার `তসলিমা নাসরিনের`` মত করে, প্রথা সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তন আমরা চাই, তবে বাস্তব বিবর্জিত নয়, বাস্তব সম্মত।
প্রসঙ্গক্রমে, আবার সেই শুভকাঙ্খি বন্ধুটি বলল- ``তসলিমার প্রথম প্রেম ছিল রুদ্র, এরপর আরও অনেক পুরুষ তসলিমার নাসরিনের জীবনে এসেছে । এমন কি, তসলিমা গে, লেসবিয়ান এদের সাথে ও সহবাস করেছেন।`` মানুষের যৌন স্বেচ্ছাচারিতা আর বিভিন্ন খাবারের পদের রুচি-বোধ প্রায় নিকট সম আত্মীয়। নিশ্চয় তা প্রেম নয়, প্রেম কী ছেলে`র হাতে মোয়া? কিন্তু বিপরীত লিঙ্গ, সমকামী, উভ-কামী, গে, লেসবিয়ান সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান কী বলে? যৌনতার ক্ষেত্রে আধুনিক প্রচলিত বিজ্ঞানের তত্ত্ব বলে, পৃথিবীর আদি এবং অন্তে মূলত সমকামী-বি-সমকামী বলে কোনো নির্ধারিত এবং নিদিষ্ট সীমা রেখা নেই। নারী পুরুষ সকলের মধ্যেই লেসবিয়ান, গে, এবং রুপান্তর-কামী লিঙ্গ পরিবর্তন অসম আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। হোমোসেক্সুয়াল বনাম হেটেরোসেক্সুয়ালের দ্বিমেরু করণ বিভাজন ধারাবাহিকতা নিতান্তই অর্বাচীন। শুধু ``তসলিমা নাসরিন`` কেনো? প্রতিটা মানুষ তার নিজের শরীরকে পর্যন্ত অদম্য ভালোবাসে সেক্ষেত্রে নারী-পুরুষের স্ব-মৈথুন প্রকৃত উদাহরণ নয় কী?
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ``তসলিমা নাসরিন`` রুদ্র থেকে শুরু করে অনেক পুরুষের হাত ঘুরে এমন কী (বন্ধু`র কথায়) গে, লেসবিয়ানদের সাথে সহবাস করেছেন, বলার অপেক্ষা রাখে না, তিনি বিষম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, পুরুষতান্ত্রিক, পিতৃতান্ত্রিক, মাতৃ-তান্ত্রিক সব ধরনের প্রথা সমাজ সংস্কৃতি`র অবকাঠামো থেকে, নিজের শরীর মন থেকে প্রচলিত তথা কথিত ধ্যান ধারনা থেকে অবমুক্ত করতে পেরেছেন, প্রশংসার যোগ্য, জীবনে`র এতটা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে, এতটা সাহসিকতা`র পরিচয় দিয়ে তিনি কেনো সেই সাতাশ বছর বয়সী বেলিজ বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন যুবকের দোর গোঁড়ায় এসে থেমে গেলেন? তিনি নিজে`ই বলছেন- `` ওর বয়স সাতাশ। আমার হাঁটুর বয়সী। এখানেই পুরুষের মতো হতে পারি না।`` তবে কী সাতাশ বছর বয়সী যুবকের কাছে এলে তার নারীবাদী পঞ্চ ইন্দ্রিয় বোধ জেগে উঠে? নাকি মাতৃত্ব? রুচি-বোধ? পড়ন্ত বেলার শিথিল যৌবন? নাকি শেষ অবধি নিজেও ঐ প্রথা সমাজ সংস্কার সংস্কৃতির নিয়মের বোধের কাছে আটকে গেলেন? যার জন্য তিনি সারা জীবন যৌবন দিয়ে সংগ্রাম করলেন, একের পর এক রক্ষণশীলতার দেয়াল ভাঙ্গলেন, পড়ন্ত বেলার শিথিল যৌবনে এসে নিজের ভেতরের রক্ষণশীলতার দেয়াল`টা ভাঙ্গতে পারলেন না? ভাঙ্গার প্রয়োজন ছিল, নারীবাদী`রা আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতো। কেউ পড়ে শিখে, কেউ দেখে শিখে। আমাদের অবলা মূর্খ নারী`রা পড়ে শেখার সুযোগ কালক্রমে ভাগ্য গুনে পায়। অন্তত ``তসলিমা নাসরিন``র দেখানো পথ অনুসরণ করে, দেখে শেখার সাহসিকতাটুকু দেখাতে পারতো। এবার বোধয় আমাদের অবলা মূর্খ নারী`দের ``তসলিমা নাসরিন`` হতাশ করলেন, বঞ্চিত করলেন।
বন্ধুর সাথে কথা প্রসঙ্গে, ``তসলিমা নাসরিনে``র সেই `ডেভিড`` নামের বেলিজ বুদ্ধিদীপ্ত, সুদর্শন যুবকের কথা উঠতে`ই শুভকাঙ্খি বন্ধুটি বলল- কম বয়সী পুরুষ আর বেশি বয়সী নারীর সম্পর্ক বিয়ে হয়নি এ কথা আপনাকে কে বলল ? এ রকম দৃষ্টান্ত তো অনেকই আছে। সম্ভব নয়, হয় না, এ কথা ঠিক নয়। বেশি দূর যেতে হবে না, মহানবী এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আসতে পারে। শুধু অতীত নয় বর্তমানেও এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে। একটু চোখ মেলে দেখুন এরকম দৃষ্টান্ত এ বাংলাতেও আছে ।
বন্ধুটি, যখন আমাকে ``মহানবী`র`` উদাহরণ দিলেন, তাকে বলেছিলাম- মহানবী`র উদাহরণ, যতটা না অসম তার থেকে বেশি বৈষয়িক, নিরাপত্তা-জনিত এবং কৌশলের। এবং তার জীবনের পরবর্তী খতিয়ান`গুলো আরও মারাত্মক বিব্রতকর। আরব বিশ্বে যতদূর জানি, নারী পুরুষের অসম বিয়ে গুলো হয় অর্থনৈতিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে এবং অসম বয়সে ভীমরতি ও ছ্যাবলামো করার জন্য, যৌনতা কিংবা প্রেম নয়। অসম বিয়ের মধ্যে বয়স্ক-জন মারা গেলে প্রবর্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি মালিক হওয়ার লোভে পড়েই অসম বিয়ে`গুলো এখানে প্ররোচিত হয়ে থাকে। অসম বিয়ে, প্রেম, যৌনতার ক্ষেত্রে এটাই আরব বিশ্বের জন্য বাস্তব সত্য।
আমার কথাটি বন্ধুর মনে ধরেনি, তিনি আমাকে বোধয় একটা বোয়াল মাছে`র ভেটকি`ই দিলেন তার নিজের প্রত্যুত্তরে। কিন্তু বন্ধুটি যেহেতু ``মহানবীর`` উদাহরণ টেনে ধরেছেন, তার অবগতির জন্য আর একটু বলেছিলাম, তা হলে কেনো ইসলামি সংস্কৃতির মূল্য বোধে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এবং অনন্য ইসলামী সংস্কৃতি মূল্যবোধের প্রাসঙ্গিক মুসলিম জনপ্রিয় আচার লৌকিকতার মতন বয়স্ক নারী`র অসম, প্রেম, বিয়ে, যৌনতা সমান জন প্রিয়তা না পেয়ে বৈষম্য পীড়িত হলো কেনো? (শ্রেণী বিন্যাসের বৈষম্যের কথা না, হয় বাদেই দিলাম)। ইসলামী সংস্কৃতি মূল্যবোধে (সব ধর্মে পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধে) বিয়ে করতে গেলে পুরুষ (পাত্র) পক্ষ কম বয়সী নারী`র নির্বাচিত করার জন্য সামাজিক স্বীকৃতির তাগিদ অনুভব করে না, অনায়াসে পেয়ে যায়, তার বিপরীতে নারী` ক্ষেত্রে বরং উল্টা, আজ পর্যন্ত দেখিনি, ইসলামে নারী বিয়ে করার জন্য কম বয়সী পুরুষ সঙ্গিনী নির্বাচনে সামাজিক স্বীকৃতির তাগিদ অনুভব করেছে কী? সেক্ষেত্রে বৈষম্য পীড়িত না হয়ে অসম নারী`র পুরুষ সঙ্গিনী নির্বাচনে ``মহানবীর`` সমান দৃষ্টি ভঙ্গির তাগিদ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না? এমন নয় যে, বিষয়টা তিনি জানতেন না? তিনি নিজে খাদিজা`কে ভোগ দখল(অসম বিয়ে)করলেন, এবং তারেই ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রভাব বলে, নারীকেও তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তি রূপে হস্তগত করলেন। সেই থেকে নারী ধর্মীয় আভরণে পরুষের কাছে, নারী শুধু ব্যক্তিগত সম্পত্তি, মানুষ না, এবং নিজের পুরুষতান্ত্রিক সুবিধা জিইয়ে রাখা`র জন্য এমন এমন সব নৈতিক বিবর্জিত কর্মের অনুমোদন নারী`র উপর চাপিয়ে দিয়ে গেলেন, মৃত্যু শয্যাশায়ী মুমূর্ষ রোগী`র মত নারী আজও সে যন্ত্রণা ভোগ করছে।
নারীকে পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তির ভাবার যদেষ্ট কারণ পুরুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। এটা হচ্ছে ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে নারী করে রাখার পুরুষতান্ত্রিক মগজের কৌশল। এবং যেখানে ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষণশীলতা বেশি, সেখানে পুরুষতান্ত্রিক মগজের কৌশলের স্থায়িত্ব বেশি। তাই নারীকে মানুষ হয়ে উঠবার জন্য উন্নত জ্ঞানময় সমাজ ব্যবস্থায় বিকল্প নেই। একটি উন্নত জ্ঞানময় সমাজ ব্যবস্থায় দিকে ব্যক্তি পরিবার সমাজ যতদিন হেটে না যাছে, ততদিন পর্যন্ত নারীকে মানুষ হিসাবে পুরুষতান্ত্রিক মগজ স্বীকৃত দেবে না। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক মগজ কৌশল অবলম্বনের দিকে নারীকে নিয়ে দাড় করিয়ে দিচ্ছে পুঁজিবাদ বিপণনের দিকে, সেখানে গিয়েও নারী একই পুরুষতান্ত্রিক মগজের বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে আরও ভয়াবহ ভাবে। ব্যক্তি মালিকাধীন সম্পত্তি পরিবার ধর্মীয় প্রথার বিরুদ্ধে যতদিন পর্যন্ত না স্বয়ং নারী বিদ্রোহ করছে, ততদিন পর্যন্ত নারীকে মানুষ হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
তবে হ্যাঁ, দেশ, কাল সংস্কৃতির রুচি-বোধে ধর্মের অস্বাভাবিক সামাজিক স্বীকৃতি পরিত্যক্ত করে নাগরিক অধিকার বোধ রক্ষার তাগিদে নারী`র অসম প্রেম বিয়ে যৌনতা এখন একটা স্বাভাবিক ঘটনা। সম্প্রতি ৪৫ বছর বয়সী মার্কিন গায়িকা ও অভিনেত্রী ``জেনিফার লোপেজ`` তার চেয়ে বয়সে ২০ বছরের ছোট প্রেমিক ``ক্যাসপার স্মার্ট``কে বিয়ে করতে যাচ্ছেন। নারী`র অসম প্রেম বিয়ে যৌনতার ক্ষেত্রে তা একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সন্দেহ নেই। তবুও নাকি, চরম অনিশ্চয়তায় ভুগেন ``জেনিফার লোপেজ``। তার কারণ অনেক রকম হতে পারে। সব ধরনের সম্পর্কে টানাপোড়নে-র অনিশ্চয়তা একটা না একটা থাকেই, নারী, পুরুষ, লিঙ্গ নির্বিশেষে। কিন্তু বাঙ্গালী নারীর মত মানসিক হীনমন্যতায় ভোগেনি। নিজের সম্পর্কে ``জেনিফার লোপেজ`` বলেন, ‘মাঝেমধ্যে ওকে বলি, “কেন তুমি কমবয়সী এক সঙ্গী জোগাড় করে চলে যাচ্ছ না? আমার কাছ থেকে তুমি কী চাও?” তবে সত্যিটা হলো আমরা কেউই জানি না ভবিষ্যতে কী হবে? বর্তমান সময়টা আমরা উপভোগ করছি।’
আরব বিশ্বে শুধু কী তাই? আরব বিশ্বে এখনো নিজের নামের সাথে পিতৃ পরিচয়ের সাথে দাদা`র নাম কিংবা স্বামী`র নামের সাথে শ্বশুরের নামটিও বহন করতে হয়। মোটা দাগে- একটা নামের সাথে জীবিত কিংবা মৃত তিনটা নাম একজন জীবিত মানুষকে বহন করতে হয়। পদে পদে এরকম হাজারটা বৈষম্য আরব বিশ্বে বিরাজমান। হতে পারে তা দেশ কাল প্রথা সংস্কৃতির ভিন্নতার কারণে। একজনের কাছে যা ব্যতিক্রম অন্যজনের কাছে তাই স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক যেটা, প্রায় সব দেশেই `ধর্মের সাথে অন্তর্দেশীয় লৌকিক আচার অনুষ্ঠানের সংস্কৃতির পরস্পর বিরোধী সংঘাত বিরোধ থাকা সত্ত্বেও, ধর্ম`গুলো ভালো ভাবেই বহাল তবিয়তে টিকে আছে। দেশে দেশে পীড়ন শাসন শোষণ সুদখোর মহাজনের মত ঢাক ঢোল পিটিয়ে বেশ রুজি-রোজগার করছে।
আর যদি বাংলা`র কথা বলি, নারী পুরুষের অসম প্রেম, বিয়ে, যৌন সম্পর্ক (অসংখ্য নয়) কম বয়সী পুরুষ আর বেশি বয়সী সাধারণ নারীর`দের ক্ষেত্রে দু-চার`টা যা ঘটে, তা ব্যতিক্রম এবং কাকতালীয় তা কিন্তু সমাজের প্রচলিত স্তরের থেকে তার উপরে স্তরে উত্তরণের পৌঁছানোর পরিবর্তনের সূচকের দিক নির্দেশন করে না। প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়ম তার আগের নিয়মে আগের জায়গায় থেকে যায়। প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়মের বিরুদ্ধে গণহারে মানুষের প্রচলিত সমাজ সংস্কৃতি নিয়মের ধ্যান ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে, ধুয়ে মুছে বিলুপ্ত সাধন করে নতুন প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়মে মানুষ মনস্তাত্ত্বিক ভাবে ঘুরে দাড়াতে সাহায্য করে। সেই নতুন প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়মে মানুষ মানুষকে অশ্রাব্য, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কাউকে শুনতে হবে না, নতুন প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়মে ইতর, অসভ্য ও অমানবিক বৈষম্য পীড়িত মানুষ হবে না।
অসংখ্য নয়, খেয়াল করবেন, বহুল কথিত আছে, পুরানো প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়ম দু’চার জনই বদলায়, ধাক্কা দেয়, থাপ্পড় দেয় প্রথা সমাজ সংস্কৃতি নিয়ম রীতিমতো শীতের কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে নাড়িয়ে দিয়ে যায়। ``তসলিমা নাসরিন`` তাদের একজন। তবে হ্যাঁ, ``তসলিমা নাসরিন`` যেভাবে নারী জীবনের কথা বলেছেন, তার অনেক লেখা`ই বহুল আলোচিত বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই `তসলিমা নাসরিন` অধিক উচ্চারিত একটি বিতর্কিত নাম। প্রগতিশীল কিছু মানুষদের কাছে শ্রদ্ধাভাজন। এমনকি আমি নিজেও তার লেখার বিষণ ভক্ত, অনুরক্ত পাঠক। তার মানে এই না, তার সব লেখার মতবাদের প্রতি সহানুভূতিশীল। (পুরুষতান্ত্রিক বা নারীবাদী মনোভাব বাদ দিয়ে) মানুষের সাথে মানুষের মত পার্থক্য থাকতেই পারে, ``তসলিমা নাসরিনের`` নিজের স্বার্থসিদ্ধির কারণে হলেও অন্তত মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কিছু লেখা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এমন সমর্থন যোগ্য। এবং ``তসলিমা নাসরিন`` ভূয়সী প্রশংসার পর প্রশংসার করলেও হয়তো ``তসলিমা-বাদী``রা কম বলবে, বরং উল্টা আমাকে আবারও নিন্দুক ঠাওরাবে, পুরুষতান্ত্রিক বলবে, ছক বাধা ভাবনা আর প্রথাগত যুক্তি বলে পালিয়ে যাবে।
মহানবীর অসম বিয়ের কথায় বৈষয়িক, নিরাপত্তা-জনিত এবং লেনদেনের কৌশলের কথা বলাতে, বন্ধুটি এবার আমাকে বোধয় ক্ষেপে গিয়ে অবশেষে লাল কার্ড দেখিয়ে দিলেন, তার নিজের প্রত্যুত্তরে। - এক জন পুরুষের কম বয়সে বিয়ে করলে সেক্ষেত্রে ব্যবসা লেনদেন, তার জন্য আজব আপনার প্রথাগত যুক্তি ।আপনার ছক বাধা চিন্তা আপনার মাঝে লালন করুন ।অতিক্রম করার প্রসঙ্গ টি ছিল মূলত।আর আলোচনায় যেতে ইচ্ছে নেই এই ছক-বাধা চিন্তা দেখে ।পরবর্তী তে একই যুক্তি অবতারণা করবেন । ধন্যবাদ । ভালো থাকুন ।বিদায় ।
বুঝতে পারলাম, ``তসলিমা নাসরিন`` পড়ে বন্ধুটি অনুকরণ প্রিয় ও সত্যিকার অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। মনস্তাত্ত্বিক ভাবে আগাগোড়া প্রভাবিত ``তসলিমা-বাদী` ভাব শিষ্য হতে পেরেছেন। অন্তত তার লেখা, মন্তব্য, তাই নির্দেশন করে। আমি আগেও বলেছি, তথা কথিত প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির নিয়ম ভাঙ্গার মোক্ষম কৌশলের ধনুকের বানটা হলো দর্শনের বাস্তব প্রয়োগ, প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে না গ্রহণ যোগ্য হলেও অন্তত নিজের জীবনে প্রতিষ্ঠিত সত্য বলে মনে হবে। এবং নিজের জীবনে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে অন্যকে বলতে হবে। তা না হলে, সেও হবে দর্শনের কথার ফুল ঝড়িয়ে উলু-বনে মুক্তা ছড়ানোর মত আত্ম প্রতারক, আত্ম প্রবঞ্চক, তার চেয়ে বরং আত্মঘাতী হওয়া অনেক সুবিধার। `তসলিমা নাসরিনের`` মত করে, প্রথা সমাজ সংস্কৃতির পরিবর্তন আমরা চাই, তবে বাস্তব বিবর্জিত নয়, বাস্তব সম্মত, ভেঙ্গে, করে, আঙ্গুল উঁচিয়ে রক্ষণশীল চোখের পর্দা সরিয়ে দিতে হবে। নিজে নিদিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব রেখে অন্যকে প্রল্লুদ্ধ করে আগুনের গোলা`র মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলার মধ্যে পণ্ডিত আছে কিন্তু দর্শনের মহত্ব নেই। অন্যের, প্রথাগত ``শাস্ত্রীয়`` দর্শনের মনস্তাত্ত্বিক বোঝা আর ``তসলিমা-বাদী`` মনস্তাত্ত্বিক বোঝা`র দর্শনের মধ্যে তবে আর কী ব্যবধান থাকল?
`তসলিমা নাসরিনের`` খুব কম লেখা আছে যে, আমি পড়িনি। আজকের দিনে বাংলার নারী জাগরণে ``বেগম রোকেয়ার``পর বহুল আলোচিত বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই `তসলিমা নাসরিন`নামটি অধিক উচ্চারিত একটি বিতর্কিত নাম। একথাটি বলা`র যথেষ্ট কারণ আছে `তসলিমা নাসরিনের`` বাস্তব বিবর্জিত ঘটনার কারণেই তার নামটি এতো উচ্চারিত এবং বিতর্কিত। লেখার জন্য নয়। কারও লেখা পড়া দোষের কিছু নয়, ভাল মন্দ সবেই পড়া উচিত, বাংলাদেশে`র রাজধানী ঢাকা`র মগবাজারের বাঁশ পট্টি থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের স্ট্যাটফোর্ড-অন-অ্যাভন। বাংলা চটি লেখক ``রসময় গুপ্ত`` থেকে ``শেকসপিয়র``। কারও লেখা ভাল লাগতে পারে, প্রেরণা`র উৎস হতে পারে। জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারে। চিন্তার দর্শনকে শান দিতে উৎসাহিত করে। দৃষ্টি ভঙ্গিতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসতে পারে। ধীরে ধীরে শম্বুক গতিতে প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আসে। ``তসলিমা নাসরিন`` সে চেষ্টা এখনো অব্যাহত রেখেছেন। আশার বানী, প্রথা সমাজ সংস্কৃতিতে নিয়মে হয়তো পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। বন্ধুটিকে, দিয়ে বুঝি, কিন্তু কারও লেখা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া মানসিক নিপীড়নের বৈকল্য ছাড়া কিছু নয়। অনেকটা রাজনীতিতে যেমন তৃণমূল কর্মীরা প্রভাবশালী নেতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। ব্যাপারটা ঠিক ঐরকম। মানসিক চিন্তার সন্ত্রাসও বলা যেতে পারে। তাতে করে নিজের চিন্তার দর্শন আদেশ নিষেধের মত খর্ব হয়ে পড়ে। লেখা স্ব-প্রণোদিত চিন্তার দর্শন। অনুকরণ প্রিয় না হয়ে অনুশীলন প্রিয় হলে বন্ধুটি লেখায় বেশ ভাল করত। নিজের কল্পিত ছক-হীন দর্শনকে নিজের জীবনের বাস্তব সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত করতে আরও স্বাধীন চেতা আত্ম প্রত্যয়-শীল হয়ে উঠতে পারত। বন্ধুটি হয়তো জানে না- অন্যের ঠোটে`র আভরণ, আঙ্গুলের ছাপ, পায়ের পাতা, হাতের লেখা, চিন্তার দর্শন শত চেষ্টা করে অনুকরণ করা যায় না।
বন্ধুটিকে প্রত্যুত্তরে, বললাম-আপনার লেখায় যতগুলো মন্তব্য দিয়েছি তার সবগুলো`ই প্রচলিত প্রথা সমাজ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যায়। ``তসলিমা নাসরিনকে`` ছোট করে, হেয় করে দেখার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই। হয়তো, আপনি বুঝতে অক্ষম, নয়তো আমি আপনাকে বুঝাতে অক্ষম। আমার জ্ঞানের দৌড় বড় সীমিত। আর এসব যদি শুধু`ই প্রথাগত যুক্তি কিংবা ছক বাধা ভাবনা হয়। তবে বলবো, প্রথাগত যুক্তি ও ছক বাধা ভাবনা`র বাইরে যেতে আমাকে আরও কোটি আলোকবর্ষ বেচে থাকতে হবে। নতুবা, অজ্ঞতা নিয়ে এই শূন্য দশকের কোনো এক সময় আমাকে মরে যেতে হবে। কারও যুক্তি বোধ মনে না ধরলে`ই তা প্রথাগত যুক্তি বা ছক বাধা ভাবনা ভেবে সীমা-রেখা`র লাগাম টেনে ধরা`টা বরং অধিক সংকীর্ণ মনের পরিচয় বহন করে। আগাছার মত ভিতর থেকে ভাবনা`র প্রাণ শক্তির নির্যাস শুষে নেয়, দুঃখিত। আর আলোচনায় যেতে ইচ্ছে করছেন না, সেটাও আপনার ইচ্ছে। কেউ আপনাকে মাথার দিব্যি দেয়নি। আর ছক বাধা ভাবনা বা প্রথাগত যুক্তি বলতে কী বুঝালেন, তাও বুঝলাম না। ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
তবে "বেগম রোকেয়া" ও "তসলিমা নাসরিন``কে কতজন নারী অনুকরণ করে তার পরিসংখ্যানের মুখ বন্ধন আমার জানা নেই, আর এই ভাবে কারও পক্ষে পরিসংখ্যানের মুখ বন্ধন দেওয়া সম্ভব নয়। বোধ করি, পাঠক তা জানেন। ``বেগম রোকেয়া`` পর নারী মুক্তি আন্দোলনের জন্য আরো বেশ কয়েকজন মহীয়সী এসেছেন। তাছাড়া ``তসলিমা নাসরিন পড়ে`` কতজন নারী সত্যিকার অর্থে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন, প্রশ্ন সাপেক্ষ। তারও চেয়ে বড়ো কথা আজকাল আমাদের দেশে দুই শ্রেণীর মানুষ খুব চোখে পড়ে, লিঙ্গ নির্বিশেষে। এরা হয় হুমায়ুন আজাদ হতে চান, নইলে তসলিমা নাসরিন। অথচ প্রথমোক্ত জনকে ধারণ করা কতোটা কঠিন তা বোধহয় তারা চিন্তাও করতে পারেন না। আর নারী পুরুষ সম্পর্ক বা শারীরিক চাহিদা নিয়ে লিখলে বা পুরুষদের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে না হওয়া যায় ``তসলিমা নাসরিন`` না তাতে সমাজের কোনো উপকার ঘটে—এটা বোঝেন না এ জাতীয় বেশীর ভাগ নারীবাদী লেখক``। উপরোক্ত কোড করা কথা`গুলো আমার না, আমার এক পরিচিত নারীবাদী লেখিকার কথা।
শেখর সিরাজ
Tidak ada komentar: প্রসঙ্গ: তসলিমা নাসরিন ও বন্ধু
Posting Komentar