যারা সবসময় সিএনএন কিংবা বিবিসির মত আন্তর্জাতিক চ্যানেল গুলোতে দিনে একবার হলেও ঢুঁ মারেন, তাদের সকলের কাছে Christiane Amanpour একটি পরিচিত নাম। ব্রিটিশ-ইরানী এই সাংবাদিক ও টেলিভিশন হোস্ট CNN এর ‘ইন্টারন্যাশনাল করেসপন্ডেন্ট’ হিসেবে কাজ করছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে। CNN এ তার পথ চলার শুরু সেই ১৯৮৩ সাল থেকে। তার উপস্থাপনায় CNN International এর ইন্টারভিউ প্রোগ্রাম ‘Amanpour’ আন্তর্জাতিক ভাবে অত্যন্ত সমাদৃত একটি সমসাময়িক অনুষ্ঠান। এছাড়াও তিনি ABC New চ্যানেল এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক অ্যাঙ্কর হিসেবে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
সিএনএন এর "Girl Rising" প্রকল্পের অংশ হিসেবে পৃথিবীর সব মেয়েদের উদ্দেশ্য করে সম্প্রতি তিনি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। "Girl Rising" প্রকল্পের মূলবিষয় বিশ্বের স্বনির্ভর মেয়েদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টরী বানানো। এই ডকুমেন্টরীতে মেয়েদের এই বিশাল পরিবর্তনের পেছনে তাদের শিক্ষার শক্তি ও ভুমিকা তুলে ধরা হবে।
আর সবার মত আপনিও এর একজন প্রাপক। পড়ুন তবে তার এই খোলা চিঠিটি।
প্রিয় মেয়েরা,
বিশ্বে প্রায় ৭ বিলিয়ন মানুষের বাস। আর এর প্রায় অর্ধেকই নারী ও মেয়েশিশু।
সেদিনের কথা ভাবুন যেদিন বিশ্বের সব নারী ও মেয়েশিশুরা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। সেই সাথে প্রকৃত অর্থেই সমগ্র বিশ্বও সেদিন সত্যিকারের ক্ষমতায়িত হবে।
এই ক্ষমতায়নের পরিবর্তন ও সাফল্য শিক্ষা দিয়েই শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উরুগুয়ে কিংবা উলান বাটর, সব উদ্যোগের পেছনে আছেঃ শিক্ষা = ক্ষমতায়ন।
একজন শিক্ষিত মেয়ে জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক কিংবা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি পেতে পারে। নিজে একটি পরিবারের জন্য জীবিকা অর্জন হয়ে উঠতে পারে। আস্তে আস্তে সে নিজেকে,তার পরিবারকে, তার গ্রাম,সম্প্রদায় এবং শেষ পর্যন্ত তার পুরো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাদের জীবনের সত্যিকারের গল্পগুলিতে ও গবেষনার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে একটি সুস্থ সমাজের অন্যতম শর্ত স্বাস্থ্যকর ও উত্পাদনশীল নারী ও মেয়েদের উপস্থিতি।
রুয়ান্ডার দিকে তাকানো যাক। ১৯ বছর জুড়ে চলা গণহত্যার শেষে আজ সেখানকার নারী ও মেয়েশিশুদের অর্জনের দিকে তাকান। আজ দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশ ও নির্বাচিত রাজনীতি তার মহিলা শক্তি দ্বারা চালিত হচ্ছে। অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে সফল ভাবে। এ যেন এক অবিশ্বাস্য গল্প। আফ্রিকার পথপ্রদর্শক হয়ে রুয়ান্ডা এগিয়ে চলেছে।
ঠিক এর বিপরিত চিত্র আমরা দেখতে পাই আরব বিশ্বে। সেখানে তাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে, অর্থাৎ নারীদেরকে জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করা হয়। ফলাফল, তেল এবং গ্যাসের মত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আরব দেশগুলো উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে আছে। তাই আরব স্প্রিং এইসব মেয়ে ও নারীদের স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন ও দেশের উন্নয়নের দিগন্তে নতুন দিনের সুচনা করেছে।
বিশ্বের মেয়েরা, আপনারাও নিজেদের খোলা চিঠি লিখুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন মহিলা ও পুরুষদের সমান ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, তখন তার জিডিপি ৫% বৃদ্ধি পায়। যে সব উন্নয়নশীল দেশে নারী ও পুরুষের সম-কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হয়, দেখা যায় সে সব দেশের ডোমেস্টিক উত্পাদন দ্বিগুণ সংখ্যায় পৌছায় । যেমন এক্ষেত্রে মিশরের জিডিপি ৩৪% এ পৌঁছাবে।
২০০৪ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষার একটি করে ধাপের শিক্ষালাভে একজন নারীর গড় আয়ের ক্ষমতা ১০% থেকে ২০% বৃদ্ধি হতে পারে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ পল স্কালটঢজ, দেখিয়েছেন মেয়েরা প্রতি বছর বিদ্যালয়ের একটি করে সেকেন্ডারি ধাপ পেরুলে প্রত্যেক অতিরিক্ত বছরের সঙ্গে তাদের 15% - ২৫% বেশী আয় ক্ষমতা বাড়ে।
কাজেই শিশু-মৃত্যু কমাতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি সীমিত রাখতে এবং HIV Aids এর বিস্তার ঠেকাতে আমাদের মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলুন। জাতিসংঘের মতে গ্রামাঞ্চলে যখনই মহিলা শ্রমিকদের শিক্ষিত হবার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তখনই তাদের মজুরি, কৃষি আয় ও উত্পাদনশীলতার উন্নতি হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মেয়েশিশু কখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না। মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে এই শিক্ষা বৈষম্য দুর করার এবার সময় এসেছে ।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ অশিক্ষিত। এদের মাঝে দুই তৃতীয়াংশ হল নারী ও মেয়েশিশু। এমন একটি পৃথিবীর কথা ভাবুন যেখানে এই নারী ও মেয়ে শিশুরা লিখতে–পড়তে জানবে, হিসাবের মৌলিক অঙ্ক করতে জানবে- এভাবেই পৃথিবী বদলে যাবে। নারীরা তাদের আয় তাদের পরিবারের খরচ ও অন্যান্য দরকারি জিনিষের জন্য খরচ করে।অথচ দেখা যায় প্রায়ই পুরুষরা তাদের আয়ের একটা বড় অংশ অ্যালকোহলের বা অন্য কোন পথে বাজে খরচ করে।
বাংলাদেশের গ্রামীন ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি বার জিজ্ঞাসা করুন- তিনি বলবেন নারীরাই সেরা। আপনি তাদের সামান্য পরিমানে ধার দিন, তারা আপনাকে ঠিক ঠিক সময়মত তা ফেরত দেবে। তাঁর ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা ঠিক এটাই বলবে আপনাকে।
বিশ্বের অধরা মেয়েদের জন্য এটাই সঠিক সময়।
মেয়েরা এগিয়ে যান! প্রমান করুন আমরাই বিশ্বশক্তি।! আমরা এটাই করবো।
Christiane Amanpour
ছবি- ইন্টারনেট
সিএনএন এর "Girl Rising" প্রকল্পের অংশ হিসেবে পৃথিবীর সব মেয়েদের উদ্দেশ্য করে সম্প্রতি তিনি একটি খোলা চিঠি লিখেছেন। "Girl Rising" প্রকল্পের মূলবিষয় বিশ্বের স্বনির্ভর মেয়েদের নিয়ে একটি ডকুমেন্টরী বানানো। এই ডকুমেন্টরীতে মেয়েদের এই বিশাল পরিবর্তনের পেছনে তাদের শিক্ষার শক্তি ও ভুমিকা তুলে ধরা হবে।
আর সবার মত আপনিও এর একজন প্রাপক। পড়ুন তবে তার এই খোলা চিঠিটি।
প্রিয় মেয়েরা,
বিশ্বে প্রায় ৭ বিলিয়ন মানুষের বাস। আর এর প্রায় অর্ধেকই নারী ও মেয়েশিশু।
সেদিনের কথা ভাবুন যেদিন বিশ্বের সব নারী ও মেয়েশিশুরা ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবে। সেই সাথে প্রকৃত অর্থেই সমগ্র বিশ্বও সেদিন সত্যিকারের ক্ষমতায়িত হবে।
এই ক্ষমতায়নের পরিবর্তন ও সাফল্য শিক্ষা দিয়েই শুরু হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উরুগুয়ে কিংবা উলান বাটর, সব উদ্যোগের পেছনে আছেঃ শিক্ষা = ক্ষমতায়ন।
একজন শিক্ষিত মেয়ে জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক কিংবা অন্য যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একটি চাকরি পেতে পারে। নিজে একটি পরিবারের জন্য জীবিকা অর্জন হয়ে উঠতে পারে। আস্তে আস্তে সে নিজেকে,তার পরিবারকে, তার গ্রাম,সম্প্রদায় এবং শেষ পর্যন্ত তার পুরো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তাদের জীবনের সত্যিকারের গল্পগুলিতে ও গবেষনার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে একটি সুস্থ সমাজের অন্যতম শর্ত স্বাস্থ্যকর ও উত্পাদনশীল নারী ও মেয়েদের উপস্থিতি।
রুয়ান্ডার দিকে তাকানো যাক। ১৯ বছর জুড়ে চলা গণহত্যার শেষে আজ সেখানকার নারী ও মেয়েশিশুদের অর্জনের দিকে তাকান। আজ দেশটির শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশ ও নির্বাচিত রাজনীতি তার মহিলা শক্তি দ্বারা চালিত হচ্ছে। অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে সফল ভাবে। এ যেন এক অবিশ্বাস্য গল্প। আফ্রিকার পথপ্রদর্শক হয়ে রুয়ান্ডা এগিয়ে চলেছে।
ঠিক এর বিপরিত চিত্র আমরা দেখতে পাই আরব বিশ্বে। সেখানে তাদের মোট জনসংখ্যার অর্ধেককে, অর্থাৎ নারীদেরকে জীবনের মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত করা হয়। ফলাফল, তেল এবং গ্যাসের মত প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আরব দেশগুলো উন্নয়ন সূচকে পিছিয়ে আছে। তাই আরব স্প্রিং এইসব মেয়ে ও নারীদের স্বাধীনতা, ক্ষমতায়ন ও দেশের উন্নয়নের দিগন্তে নতুন দিনের সুচনা করেছে।
বিশ্বের মেয়েরা, আপনারাও নিজেদের খোলা চিঠি লিখুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন মহিলা ও পুরুষদের সমান ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়, তখন তার জিডিপি ৫% বৃদ্ধি পায়। যে সব উন্নয়নশীল দেশে নারী ও পুরুষের সম-কর্মসংস্থানের সুযোগ করা হয়, দেখা যায় সে সব দেশের ডোমেস্টিক উত্পাদন দ্বিগুণ সংখ্যায় পৌছায় । যেমন এক্ষেত্রে মিশরের জিডিপি ৩৪% এ পৌঁছাবে।
২০০৪ সালের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষার একটি করে ধাপের শিক্ষালাভে একজন নারীর গড় আয়ের ক্ষমতা ১০% থেকে ২০% বৃদ্ধি হতে পারে। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদ পল স্কালটঢজ, দেখিয়েছেন মেয়েরা প্রতি বছর বিদ্যালয়ের একটি করে সেকেন্ডারি ধাপ পেরুলে প্রত্যেক অতিরিক্ত বছরের সঙ্গে তাদের 15% - ২৫% বেশী আয় ক্ষমতা বাড়ে।
কাজেই শিশু-মৃত্যু কমাতে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি সীমিত রাখতে এবং HIV Aids এর বিস্তার ঠেকাতে আমাদের মেয়েদের শিক্ষিত করে তুলুন। জাতিসংঘের মতে গ্রামাঞ্চলে যখনই মহিলা শ্রমিকদের শিক্ষিত হবার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তখনই তাদের মজুরি, কৃষি আয় ও উত্পাদনশীলতার উন্নতি হয়েছে। জাতিসংঘের হিসাব মতে, প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মেয়েশিশু কখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যায় না। মেয়েশিশুদের বিরুদ্ধে এই শিক্ষা বৈষম্য দুর করার এবার সময় এসেছে ।
বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ অশিক্ষিত। এদের মাঝে দুই তৃতীয়াংশ হল নারী ও মেয়েশিশু। এমন একটি পৃথিবীর কথা ভাবুন যেখানে এই নারী ও মেয়ে শিশুরা লিখতে–পড়তে জানবে, হিসাবের মৌলিক অঙ্ক করতে জানবে- এভাবেই পৃথিবী বদলে যাবে। নারীরা তাদের আয় তাদের পরিবারের খরচ ও অন্যান্য দরকারি জিনিষের জন্য খরচ করে।অথচ দেখা যায় প্রায়ই পুরুষরা তাদের আয়ের একটা বড় অংশ অ্যালকোহলের বা অন্য কোন পথে বাজে খরচ করে।
বাংলাদেশের গ্রামীন ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের প্রবর্তক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি বার জিজ্ঞাসা করুন- তিনি বলবেন নারীরাই সেরা। আপনি তাদের সামান্য পরিমানে ধার দিন, তারা আপনাকে ঠিক ঠিক সময়মত তা ফেরত দেবে। তাঁর ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা ঠিক এটাই বলবে আপনাকে।
বিশ্বের অধরা মেয়েদের জন্য এটাই সঠিক সময়।
মেয়েরা এগিয়ে যান! প্রমান করুন আমরাই বিশ্বশক্তি।! আমরা এটাই করবো।
Christiane Amanpour
ছবি- ইন্টারনেট
Tidak ada komentar: মেয়েদের কাছে খোলা চিঠি
Posting Komentar