মেয়েদের জীবনে অন্যতম মাইলফলক মেনোপজ। যে সময় থেকে রিপ্রোডাকটিভ কাজকর্ম বন্ধ হয়ে আসে। ধীরে ধীরে পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে এসে তার পর একদম বন্ধ হয়ে যায়। সেটাই মেনোপজ।
শেষ পিরিয়ডকে সূচক ধরে মনে করা হয়, ওভারি বা ডিম্বাশয় কর্মক্ষমতা হারল। এর পর থেকে আর ওভ্যুলেশন হবে না। সেক্স হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের উৎপাদনও কমবে। অনেকরই মেনোপজের আগে থেকেই শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রার হেরফের হয়। তবে মেনোপজে পৌঁছনোর আগেই ১৫-২০% মহিলার হিস্টেকটমি বা জরায়ু বাদ দেওয়ার অপারেশন হয়ে যায়। তাঁরা জীবনে কবে মেনোপজ এল তা টের পান না। তবে মেনোপজের উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্য অন্য কথা।
মেনোপজের উপসর্গ
ক্লান্ত লাগা, হঠাৎ গরম লাগা বা রাতে ঘেমে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়া এ সবই মেনোপজের উপসর্গ। অনেকে মেনোপজের কথা না ভেবে এগুলোকে শারীরিক বা মানসিক অসুখের লক্ষণ হিসেবেই দেখেন। এ জন্য হিস্টেকটমির পর বছরে এক বার এফএসএইচ হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা উচিৎ। মেনোপজের আগে এই হরমোনটির মাত্রা খুব বেড়ে যায়। হরমোনের মাত্রা দেখে বোঝা যায় মেনোপজ এগিয়ে আসছে কি না।
মেনোপজ আদৌ হল কি
এটি বুঝতে পরবর্তী ১২ মাস পিরিয়ড হল কি না তার দিকে তাকিয়ে বসে থাকতে হয়। পঞ্চাশ পেরনো মহিলার যদি তিন মাস ব্লিডিং না হয় তবে মেনোপজ হওয়ার সম্ভাবনা ৫০%। তবে ছয় মাস বন্ধ থাকার পরও পিরিয়ড ও প্রিম্যানস্ট্রুয়াল সিম্পটম ফিরে আসতেও দেখেছি। আসলে ওভারির কাজ কমার পর পিট্যুইটারি আপ্রাণ চেষ্টা করে ওভারিকে জাগানোর। রক্তের এফএসএইচ হরমোনের মাত্রা বাড়তে বাড়তে ৪০ মিলি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট ছাড়িয়ে যায়। মেনোপজে পৌঁছনোর গড় বয়স ৫০-৫১ বছর। যদিও বর্তমানে জীবনযাত্রার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে অনেক মহিলাই ৫৫-তে গিয়ে মেনোপজ হয়। মাত্র ১ শতাংশ মহিলার ৪০-এর আগেই মেনোপজ হয়ে যায়। যাকে আমরা মনে করি প্রিম্যাচাওরড ওভারিয়ান ফেলিওরড।
কবে হবে মেনোপজ
অনেক ক্ষেত্রেই এটি পারিবারিক ধারার ওপর নির্ভরশীল। মা বা দিদির কম বয়সে মেনোপজ হলে আপনারও কম বয়সে হতে পারে। কত বার গর্ভধারণ করেছেন, বিবাহিত না অবিবাহিত, ওজন বা উচ্চতা এগুলি ঠিক করে না মেনোপজ কবে হবে। তবে ধূমপান, ওভারিতে অস্ত্রোপাচার বা ক্যানসারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপির দিলে ওভারি তাড়াতাড়ি কাজকম্ম গুটিয়ে ফেলে। মেনোপজ তরান্বিত হয়।
মেনোপজ ও আপনি
পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাকে এক এক জন এক এক ভাবে দেখেন। সেটা নির্ভর করে কে কোন সমাজে বাস করেন তার ওপর। এর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হল মহিলার ব্যক্তিত্ব, জীবন সম্বন্ধে ধারণা ইত্যদি। আমাদের দেশে মেনোপজকে বেশ ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। ভাবটা এ রকম, যাক বাবা ঝক্কি-ঝামেলার অবসান হল। অবাঞ্ছিত প্রেগন্যান্সির ভয় আর থাকল না। পিরিয়ড থাকায় যে কোনও আচার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারার ঝামেলা থেকেও মুক্ত হলাম।
সবার ক্ষেত্রে ছবিটা কিন্তু এ রকম নয়। যাঁরা পশ্চিমী ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী, তাঁরা পিরিয়ড বন্ধ হওয়াকে সহজ ভাবে নিতে পারেন না। তাঁদের কাছে মেনোপজ মানেই সৌন্দর্যের দফারফা। নারীত্ব কমল। সব থেকে বড় কথা হল বিপরীত লিঙ্গের মানুষের কাছে আকর্ষণ কমল। অনেকে এমনও ভাবেন যে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে গেল চিরতরে।
এই ভাবনা থেকে আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে। অবসাদ ঘিরে ধরে। এক জন মহিলার মেনোপজ সংক্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গী গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর পরও তাঁর জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় পড়ে আছে। পোস্ট মেনোপজাল সিম্পটম সামলে বাকি দিনগুলি কীভাবে যাপন করবেন, তার ওপরও এই ভাবনার প্রভাব রয়েছে।
মেনোপজই শেষ কথা নয়
মেনোপজ মানেই সম্পূর্ণ শাট ডাউন নয়। মেনোপজের পর ওভারি থেকে ডিম্বাণু নিঃসরণ বন্ধ হলেও হুট করে সব হরমোন নিঃসরণ থেমে যায় না। স্বল্প মাত্রায় হলেও ইস্ট্রোজেন এর পর বহু বছর তৈরি হতে থাকে। তাছাড়া টেস্টোস্টেরন নারীর শরীরে ফ্যাটের সান্নিধ্যে টেস্টেস্টেরন ইস্ট্রোজেনে রূপান্তরিত হতে থাকে। খুব মোটাসোটা মহিলাদের ইস্ট্রোজেন লেভেল বেশি থাকায় হঠাৎ করে মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পরও ব্লিডিং হতে পারে। মেনোপজ হওয়ার পর সব মহিলাই কিন্তু সমস্যায় ভোগেন না। ১০০ জনের মধ্যে ১৫ জনের হট ফ্লাশ, গরমলাগা, নাইট সোয়েট, খিটখিটে মেজাজ দেখা যায়। বুক ধড়ফড়, উদ্বিগ্নতা, ব্রেস্টে ব্যথা, তলপেটে ব্যথা, কোমরে ও পায়ে ব্যথা, ইউরিনের ইনফেকশন, ভ্যাজাইনা শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা যায়। তা ছাড়া বহু বছর হরমোন বন্ধ থাকলে অস্টিয়োপোরেসিসের সম্ভাবনা বাড়ে।
তবে আগে দেখে নিতে হয় অন্য কোনও কারণে এই সব হচ্ছে কি না। যদি হরমোন ঘাটতিই এক মাত্র কারণ হয়, তবে হরমোন দিয়ে তাঁর চিকিৎসা করতে হয়।
Tidak ada komentar: সেকেন্ড ইনিংস
Posting Komentar