বয়ঃসন্ধিকাল - খুবই স্পর্শকাতর একটা সময়। শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পদার্পণের এই সময় বেশ অন্যরকমও বটে। এই সময় শরীর এবং মনে আসে নানা রকমের পরিবর্তন। মূলত বেশির ভাগ মানসিক পরিবর্তনই আসে অজানা-অচেনা শারীরিক পরিবর্তনের হাত ধরে। যেমন শান্তশিষ্ট মেয়েটি হয়তো হয়ে গেল প্রচণ্ড খামখেয়ালি, কথায় রেগে যায়। আবার যে ছেলেটি ছিল ভীষণ চঞ্চল সে হয়তো নিজের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে। নিজের রাগ-অভিমান-আবেগ সব নিজের ভেতরেই রাখে।
আমরা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু বয়ঃসন্ধিকালিন সমস্যার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। সব ছেলেমেয়েরই এ সময়ে একটা সমস্যা দেখা দেয়, আর তা হলো 'আইডেনটিটি ক্রাইসিস'।
হঠাত্ করে ঘটতে থাকা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, হঠাত্ করে হারিয়ে যাওয়া শৈশব, আগের মতো করে সব কাজ করতে না পারা - এসব কিছুর প্রভাব পড়ে ছেলেমেয়েদের ওপর। ফলে কেউ হয়ে যায় ভীষণ আবেগী, কেউ হয় উত্তেজিত, আবার কেউ হয়ে যায় গম্ভীর। এই সময়ে মা-বাবা তো বটেই, আশেপাশের মানুষজনের উচিত তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা।
কী করবেন :
*ছেলেমেয়েদের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনগুলো খুবই স্বাভাবিক। এগুলো খারাপ লাগলেও ধৈর্য ধরে ওদের কথা শুনুন। অযথা চাপ সৃষ্টি করবেন না বা রেগে গিয়ে বকাঝকা অথবা খারাপ আচরণ করবেন না।
*এ সময় সবার আগে প্রয়োজন ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা বুঝে ওঠা। ওদের সাথে বন্ধুর মতো আচরণ করুন। নিজের বয়ঃসন্ধির সময়কার কথা মনে করুন। ওদের সমস্যা ও মানসিক অবস্থা বুঝে উঠতে সুবিধা হবে।
*অনেক সময় মনোযোগ পেলে ছেলেমেয়েদের সমস্যা অনেকখানি সমাধান হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত মনোযোগ ছেলে বা মেয়ের কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন।
*এ সময়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য এক ধরনের আকাঙ্ক্ষা জন্মায়। তাই কিছু কিছু কাজ ওদের একা একা করতে দিন। এ সময়ে বাইরের জগতের সাথে যত বেশি আদান-প্রদান হয় তারা তত তাড়াতাড়ি সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছুট দেবেন না।
*আপনার সন্তানের মধ্যে যদি কোনো সম্ভাবনা বা সুপ্ত প্রতিভা থাকে, তাহলে তাকে জাগিয়ে তুলতে এটাই উপযুক্ত সময়। তাকে উত্সাহ দিন ও সহায়তা করুন। তবে নিজের ইচ্ছা-অনিচ্ছা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেবেন না। অতিরিক্ত চাপ ওদের মধ্যে বিষণ্নতার সৃষ্টি করতে পারে।
*কোনো কাজে অসফল হলে এ সময়ে ছেলেমেয়েরা খুব ভেঙ্গে পড়ে, হতাশ হয়ে যায়। তাদের পাশে থাকুন। সন্তানকে সাফল্য ও ব্যর্থতা দুটোই মেনে নিতে শেখানো এ সময়ের জরুরি।
*অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি নানা সৃজনশীল কাজে দক্ষ থাকে। বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা কাটানোর জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড অনেক সহায়তা করে। এসব ব্যাপারে আপনার সন্তানকে উত্সাহ দিন। ছবি আঁকা, নাচ-গান, আবৃত্তি, অভিনয় ইত্যাদি আপনার সন্তানের মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা কাটাতে সাহায্য করবে। পড়াশোনার বাইরের এসব কাজ সন্তানের শারীরিক, মানসিক ও সৃজনশীল বিকাশে সহায়তা করে।
*দলগত কাজে সন্তানকে উত্সাহ দিন। এতে ওর মধ্যকার সংকীর্ণতা যেমন দূর হবে, তেমনি রাগ, ক্ষোভ, যন্ত্রণা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও গড়ে উঠবে।
*পরিবারের ছোট ছোট কিছু কাজের দায়িত্ব ছেলেমেয়েদের দিয়ে দেখতে পারেন। এতে ওরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ। হতাশা ও বিষণ্নতা কাটাতে দায়িত্ববোধ খুব কাজে দেয়।
*বয়ঃসন্ধিকালে মা-বাবার সঙ্গ না পেলে অনেক সময় সন্তান বিপথে চলে যায়। সঙ্গদোষে মাদক বা অসত্ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা এ সময় নেশাদ্রব্য সেবন করে একাকিত্বের অনুভব থেকে। তাই সন্তানকে পর্যাপ্ত সময় দিন এবং বয়ঃসন্ধির এই বিশেষ সময়ে তাদের পাশে বন্ধুর মতো থাকুন।
Tidak ada komentar: বয়ঃসন্ধির বিশেষ ক্ষণে...
Posting Komentar