ছোটবেলা থেকেই আমাদের এই শিক্ষা দেয়া হয় যে, মানুষ সামাজিক জীব! মানুষ আসলেই সামাজিক জীব এবং তাকে ঘিরে থাকে সমাজিক নানা সম্পর্ক। পরিবারিক বিভিন্ন সম্পর্ক মানুষের তো থাকেই, পাশাপাশি সামাজের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সে খুঁজে নেয় নানান সম্পর্ক। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা এমনই।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু তো হয়ই, অন্য নানাভাবেও গড়ে উঠতে পারে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমাদের সমাজে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে কখনোই বন্ধুত্ব হতে পারে না! এখনকার দিনে কথাটা যদিও সত্যি নয়, তবে ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্ব অন্য সম্পর্কের দিকে মোড় নিতেই পারে। প্রেমের সম্পর্ক তো বটেই, হতে পারে বিয়েও। তবে বন্ধুর সাথে বিয়ে হলে যে তা সব সময় প্রেমের বিয়েই হবে, তা কিন্তু নয়! বিয়েটা পারিবারিক ভাবেও হতে পারে।
ছোটবেলা থেকে একসাথে খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন, বন্ধু ছাড়া অন্য কোনো দৃষ্টিতে দেখেননি, এমন কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেলে আপাতদৃষ্টিতে তা অনেক ইতিবাচক মনে হলেও মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে অনেক ঝামেলাও কিন্তু চলে আসে! তাঁর পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে হয়তো সবই জানেন, তাঁর মন-মানসিকতা হয়তো অনেকখানি বোঝেন, তারপরও একটুখানি দূরত্ব কোথায় যেন রয়ে যায়।
অনেকের ক্ষেত্রে এটাও দেখা যায় যে, বিয়ের পরে বন্ধুকে আবিষ্কার করেন একেবারে অন্যরূপে। এতদিনের চেনা-জানা মানুষটি যেন বদলে যায় এক লহমায়! ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেন না অনেকেই। আসলে দুজন মানুষের মধ্যকার সম্পর্কে যখন পরিবর্তন আসে, তখন বদলে যেতে পারে অনেক কিছুই। এই ব্যাপারটি মেনে নিতে না পারলে সৃষ্টি হতে পারে নানান সমস্যার। ব্যাপারটি অনেকটা প্রেমের বিয়ের মতোই। যতই চেনা-মানুষ হোন না কেন, আপনার জীবনসঙ্গীকে আপনি একটু হলেও অন্যভাবে পাবেন।
সম্পর্কের অস্বস্তি :
'বন্ধু' খুবই আপন একজন মানুষ এবং 'বন্ধুত্ব' খুবই ঘনিষ্ঠ একটি সম্পর্ক - তা সত্ত্বেও অনেক সময় দেখা যায় যে দুজন বন্ধুর মধ্যে বিয়ে হলে তাঁরা নিজেদের বিবাহ পরবর্তী সম্পর্ক নিয়ে অস্বস্তিতে ভোগেন। বিশেষ করে তাঁদের যদি বিয়ের আগে প্রেমের সম্পর্ক না থেকে থাকে!
একজন জীবনসঙ্গী সবসময় একজন ভালো বন্ধু নাও হতে পারেন, তবে একজন ভালো বন্ধু সবসময়েই একজন ভালো জীবনসঙ্গী হয়ে ওঠেন। সম্পর্কের এই ইতিবাচক দিকটি সব সময় মনে রাখুন। এটি অবশ্যই দাম্পত্যজীবন সুখী হওয়ার একটি অন্যতম কারণ।
সম্পর্কের অস্বস্তি কাটাতে একজন আরেকজনকে যথেষ্ট পরিমাণ সময় দিন। অস্বস্তির কারণে সঙ্গীকে এড়িয়ে না গিয়ে তাঁর কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করুন। অনেকে শারীরিক ব্যাপারেও অস্বস্তি বোধ করেন। বিষয়টি আপনার সঙ্গীকে খুলে বলুন এবং প্রয়োজনবোধে একে অন্যের কাছে সময় চেয়ে নিন।
নতুন আবিষ্কার :
বিয়ের পর খেয়াল করলেন আপনার বন্ধুটির অনেক বিষয় আপনার জানা থাকলেও বেশির ভাগ অংশটুকুই অজানা! প্রতিনিয়তই তাঁর সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আপনার সামনে বেরিয়ে আসছে। ব্যাপারটি মেনে নিতে অনেকেরই সমস্যা হয়। এক্ষেত্রে বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে না দেখে ইতিবাচক ভাবে দেখুন। তাঁর অজানা অভ্যাস, রুচি, পছন্দ-অপছন্দগুলো জানার চেষ্টা করুন। দেখবেন, এই আবিষ্কারের নেশা আপনাকে তাঁর কাছাকাছি নিয়ে যাবে অনেকখানি।
সমঝোতা :
বন্ধুদের মাঝে সমঝোতার কমতি থাকার কথা নয়। তারপরও হয়ে যায় মাঝে মাঝে কিছু ভুল বোঝাবুঝি। বিশেষ করে যদি সঙ্গীর যদি আগেকার কোনো সম্পর্ক থেকে থাকে এবং সেটা যদি অন্যজনের জানা থাকে, তাহলে সম্পর্কে টানাপোড়েন জন্মাতেই পারে! এসব ব্যাপার নিয়ে একজন আরেকজনের কাছে পরিষ্কার থাকুন। আপনাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটাই এক্ষেত্রে অনেক কাজে দেবে। একে অন্যের কাজ, কাজের ক্ষেত্র, স্বভাব, অন্যান্য বন্ধুবান্ধব, সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয়ে আগে থেকেই জানেন বলে সমঝোতায় আসা অনেকটাই সহজ হবে।
দায়িত্ববোধ :
বন্ধুত্বের সম্পর্কে দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে না বললেই চলে। কিন্তু এ সম্পর্ক যখন বিয়েতে গড়ায়, তখন আপনাতেই অনেক দায়িত্ব চলে আসে কাঁধে। বন্ধুত্বের সম্পর্কের দোহাই দিয়ে দাম্পত্যের এই দায়িত্ব এড়াতে চান অনেকেই! ভুলেও এ কাজ করবেন না! এতে শুধু আপনার সঙ্গীর আশাভঙ্গই হবে না, একই সঙ্গে তাঁর সাথে মানসিক দূরত্বও তৈরি হবে।
বন্ধু বা দীর্ঘদিনের পরিচিত মানুষের সাথে বিয়ে এখন আর কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। তবে বিয়ে পরবর্তী সময়ে সম্পর্কের পরিবর্তনটাই অনেকের কাছে অস্বাভাবিক ঠেকে। এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে সামলাতে পারলেই দাম্পত্য জীবন সুখের হয়ে উঠবে।
Tidak ada komentar: দাম্পত্য যখন বন্ধুর সাথে
Posting Komentar