বউ শ্বাশুড়ির সম্পর্ক চিরন্তন। প্রত্যেক মেয়েকেই একদিন বাবার বাড়ি ছেড়ে শ্বশুড় বাড়ি চলে যেতে হয়, যেখানে শুরু হয় তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়। সব মেয়ের মনেই তার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে,সেই সাথে থাকে নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর ভয় আর উত্তেজনা। তবে কয়টা মেয়ের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়?
এখনো এমন অনেক নারীই আছেন যারা তাদের শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনের শিকার। মাঝে মধ্যেই আমরা টিভিতে দেখি কিংবা খবরের কাগজে পড়ি এমন সব ঘটনার কথা। এমনকি প্রাণনাশের খবরও পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় শ্বশুর বাড়ি সম্পর্কে পিজিটিভ ধারণা রাখা যে কোনো মেয়ের পক্ষেই খানিকটা কঠিন বৈকি।
শ্বশুর বাড়িতে সবচেয়ে বেশি সময় কাটাতে হয় শ্বাশুড়ির সাথেই। তাই তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা সবচেয়ে জরুরী। অনেক সময় শ্বাশুড়িরা ভুলে যান যে তারাও এক সময় বউ হয়ে এসেছিলেন। তখন তাদের মনের অবস্থা যেমন ছিল আজকের এই মেয়েটিরও ঠিক একই হাল। তবে অনেক শাশুড়িই তা মানতে ও ভাবতে নারাজ। অনেকেই আছেন যারা নিজের সময়ে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হুওয়ার দরুণ ছেলের বউ এর সাথেও তেমনই আচরণ করে থাকেন- যা কখনোই কাম্য নয়। এমনকি বেশির ভাগ নারীর ক্ষেত্রে নির্যাতনের সিংহভাগই এসে থাকে শ্বাশুড়ি থেকে,অর্থাৎ অপর এক নারীর নিকট হতে। যা খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি।
এখনো দেখা যায় শ্বশুরবাড়িতে একজন বউকে কেবল বউই মনে করা হয়। হাতে গোনা কিছু পরিবার ছাড়া সকলেই নিজের কন্যাকে বউদের চেয়ে আলাদা চোখেই দেখেন। শুধু তাই নয়,কিছু কিছু পরিবারে তো বউদের সাথে এমন আচরণ করা হয় যেন তারা মানুষই নন। আজও কমেনি সে বৈষম্য,এখনো আসেনি সচেতনতার সুবাতাস। আজও মেয়েরা নির্যাতিত,উৎপীড়িত তাদের শ্বশুর বাড়িতে। এখনো শতকরা ৪৫% শিক্ষিত মেয়ে তাদের পড়াশোনাকে বর্হিবিশ্বে কাজে লাগাতে ব্যর্থ সংসারের চিন্তা করতে গিয়ে,শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মন রক্ষার্থে এবং মোটকথা বউ হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। তাতেও তারা কখনো কন্যা রূপে জায়গা করে নিতে পারে না তাদের শ্বশুর-শ্বাশুড়ির মনে,বউ হয়েই থেকে যায়।
প্রত্যেকেরই মনে রাখা উচিত বউ হয়ে যে মেয়েটি এসেছে সে তো কারো না কারো কন্যা,অনেক আদরে লালিত সন্তান। যাকে তার বাবা-মা পরম আদরে আগলে রেখেছেন এতটা দিন,এতটা বছর ধরে। যেমনটি তারা তাদের ছেলের ক্ষেত্রে করেছেন, ঠিক একই ভাবে। একটি মেয়ে সম্পূর্ন ভিন্ন একটি পরিবেশে,তার পুরনো সব সম্পর্ক পেছনে ফেলে চলে আসে তার শ্বশুর বাড়িতে। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির উচিত তাকে সম্পূর্ন সাপোর্ট দেয়া,যাতে করে সে নতুন পরিবেশে ঘাবড়ে না যায়, তার যেন এমন না মনে হয় যে এ বাড়িটি তার আপন নয়। এতে বঊ তথা বাড়িতে নতুন মেয়েটির চোখে আপনাদের সম্মান অনেকাংশে বেড়ে যায়। অন্যথায় শুরু থেকেই তার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় ,ফলস্রুতিতে ভবিষ্যতেও সবার সাথে সহজ হয়ে উঠতে পারে না।
শাশুড়ি মায়েরা ভেবে দেখুন-
- -তাকে (বউ) তার মত করে বুঝতে চেষ্টা করুন। আপনার বাসায় সে যেহেতু নতুন, তাকে সব গুছিয়ে নেয়ার জন্য একটু সময় দিন। ১-২ দিনেই অধৈর্য হয়ে যাবেন না। সময়ের সাথে সাথে সে নিজেই দায়িত্ববান হয়ে উঠবে।
- -সম্মান পেতে হলে সম্মান দিতে হয়। আপনার বউকে তার ন্যায্য সম্মান টুকু দিন,সে নিজেই আপনাকে সম্মান করতে উদ্বুদ্ধ হবে।
- -শ্বাশুড়িদের উচিত নিজের মেয়ের মত করে বউদের ভুল-ত্রুটি ধরিয়ে দেয়া এবং প্রথম দিকের ভুলগুলোর জন্য মাফ করে দেওয়া। যেহেতু মেয়েটি আপনাদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে অজ্ঞাত,তাকে সব কাজ ধরিয়ে দিতে সাহায্য করুন,না পারলে ভাল করে বুঝিয়ে বলুন। আপনি যখন বড়,এটুকু করতেই হবে।
- -বউকে শুধু কাজের মানুষ মনে করবেন না। তারও নিজের কোন কাজ থাকতে পারে ,নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া থাকতে পারে। সেগুলোর মূল্যায়ন করুন।
- -অযথাই সব কাজের দোষ ধরবেন না। যদি কোন কাজ পছন্দ নাও হয় অন্যভাবে বলুন যাতে সে কষ্ট না পায়।
- -ভালো কাজগুলোর উৎসাহ দিন। এতে কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে।
- -বিশেষ দিনগুলোতে (ঈদ/পূজা/অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান,জন্মদিন,তার বাবা মায়ের জন্মদিন/বিবাহ বার্ষিকী,বিয়ে বা অন্যান্য পারিবারিক উৎসব) তাকে তার পরিবারের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে দিন। এতে করে তার মন ভালো থাকবে এবং শ্বশুর বাড়ির প্রতি তার ভালোবাসা ও দায়িত্বজ্ঞান আরো বেড়ে যাবে।
- -সর্বোপরি তাকে একজন মানুষ হিসেবে চিন্তা করুন। তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা,চাওয়া-পাওয়া,ভাল লাগা-না লাগার দিকে খেয়াল রাখুন। তবেই বউ-শ্বাশুড়ির সম্পর্ক হয়ে উঠবে মধুর থেকে মধুরতর।
- - ভালো বউ মানেই কেবল গৃহবধূ নয়। বউ কর্মজীবী হলে তাঁর কাজকে সম্মান করুন। আজকাল পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, পুত্রবধূ মানেই গৃহবধূ নয়। বরং তাঁর কর্মে গর্ববোধ করুন যে এমন গুণী বউয়ের আপনি শাশুড়ি।
কিছু আত্মিক সম্পর্কের সঠিকে মূল্যায়নে তা হয়ে উঠে রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি, বউ-শ্বাশুড়ি সম্পর্কও তাই। তাদের মধ্যকার আন্তরিকতার ব্যপ্তি এই সম্পর্ককে পৌঁছাতে পারে অনেক সম্পর্কের ঊর্ধে। প্রয়োজন শুধু বিশুদ্ধ মানসিকতা ও সদিচ্ছার ।
Tidak ada komentar: শাশুড়ি মায়েরা ভেবে দেখুন
Posting Komentar