স্বামী স্ত্রী একই অফিসে কাজ করা এখন আর কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বরং অফিসে পরিচয়, কাজ করতে করতে প্রেম ও তারপর পরিণয়ের ভুরি ভুরি উদাহরণ খুঁজলেই মিলবে। ব্যাপারটা সুবিধা যেমন আছে, তেমনি অসুবিধাও কিছু কম নেই। নিজের ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সমস্যা হতে পারে, তেমনি আবার হতে পারে অফিসেও। ব্যক্তিগত আর পেশাদার জীবন মিলেমিশে গেলে কিছু সমস্যা দেখা দিতেই পারে, তবে তাতে হতাশ হলে চলবে না। বরং একটু ভেবে চিন্তে চললেই সামলে যাবে সব।
অফিসে অতি আন্তরিক আচরণ এড়িয়ে চলুনঃ
চেষ্টা করবেন অফিসে অতি আন্তরিক আচরণ এড়িয়ে চলার। আপনারা হয়তো স্বামী স্ত্রী। কিন্তু যে আচরণ আপনারা নিজেদের বাসায় নিজেদের মাঝে করে থাকেন, সে আচরণ সবার সামনে বা বিশেষত অফিসে করলে তা সবার কাছেই দৃষ্টিকটু ঠেকবে। আপনাদের সম্পর্কে ভালো ধারণা তৈরী হবার বদলে আপনারা নিজেদের অজান্তেই হাস্যকর হয়ে উঠতে পারেন। পশ্চিমা সমাজের কাপলদের মত আচরণ অফিসে না করে আমাদের সমাজে যা গ্রহনযোগ্য, সে আচরণটিই করুন। সব চেয়ে বড় কথা অফিসে পারিবারিক আচরণ না করে পেশাদারী আচরন করুন। এটা আপনাদের ক্যারিয়ারের জন্যে ভালো হবে।
কাজের সম্পর্কের ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকুনঃ
যার যার কাজের ক্ষেত্র এবং কাজের মধ্য দিয়ে আপনাদের যে সম্পর্ক সেটার ব্যাপারে স্বচ্ছ থাকুন। আপনাদের একসাথে যে কাজগুলো পরস্পরের সাহায্য নিয়ে করতে হয়, সেগুলো একসাথে করুন এবং যে কাজগুলোয় পরস্পরের বদলে অন্য কোন কলিগের সহযোগীতা দরকার, সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য নিন। অযথা একসাথে সময় কাটানোর জন্যে সব কাজ শুধু দুজন মিলে করার চেষ্টা করবেন না।
ঈর্ষা করবেন নাঃ
আপনাদের মাঝে কোনো একজনের প্রমোশন বা বস প্রশংসা করলে ঈর্ষা হতে পারে অপরজনের। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। একজনের পদোন্নতি বা সফলতা তো অপরজনেরও! তাই এ ধরনের ক্ষুদ্র মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন। বরং একজনের সাফল্যে অন্যজন অভিনন্দন জানান। অফিসের সবাইকে খাওয়াতে পারেন বা নিজেরাই উদযাপন করতে পারেন এই খুশির সংবাদটি! দেখুন ঈর্ষার চেয়ে আনন্দ কত বেশি সুখী করবে আপনাদের!
অন্যান্য সম্পর্কের ব্যাপারে ছাড় দিতে শিখুনঃ
অফিসে শুধু আপনারাই একসাথে চাকরী করেন না বরং আরো অনেক কলিগ নিয়েই আপনাদের কর্মস্থল। তাই বিপরীত লিঙ্গের কোনো কলিগের সাথে যদি আপনার স্বামী বা স্ত্রী কাজ করেন বা কাজের জন্যে অফিসের বেশির ভাগ সময় তাকে তার সাথে কাটাতে হয়, তবে এটা নিয়ে বাসায় ফিরে চেঁচামেচি শুরু করবেন না। যদি সমস্যা মনে হয়, তবে ঠান্ডা মাথায় আলোচনা করুন। কিন্তু সব চেয়ে ভালো হয় অফিসের অন্যান্য সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে যদি একটু ছাড় দিতে পারেন!
দূর্নাম করবেন নাঃ
সম্পর্কের প্রবাহ সব সময় এক রকম থাকে না। রাগ, বিরক্তি, ভালোবাসা, অভিমান সব মিলিয়েই একটা সম্পর্ক। তবে অফিসে ভুলেও সঙ্গীর দুর্নাম করবেন না। বাসায় তিনি যতই অগোছালো, ঝগড়াটে বা রাগী হোন না কেন। কারণ, সম্পর্ক যখন আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে আপনি এই খারাপ দিকগুলো ভুলে গেলেও কোন কারনে আপনার কলিগেরা আপনার সঙ্গীর সাথে বিষয়টা শেয়ার করলে এর চেয়ে খারাপ কিছু হবে না।
অফিসে ব্যক্তিগত আলোচনা এড়িয়ে চলুনঃ
আজকের বাসার বাজার কি হবে, বাচ্চার জন্যে কি কিনবেন বা বন্ধুর পার্টিতে কোন পোশাকটা পরে যাবেন, এটা নিয়ে কিন্তু আপনি বাসায় ফিরে বা অফিস ছুটির পর বাসায় যেতে যেতেও আপনার সঙ্গীর সাথে কথা বলতে পারেন। তাই অফিসে এসব প্রসঙ্গ টেনে না আনাই ভাল।
ব্যক্তিগত সমস্যা অফিসে প্রকাশ করবেন নাঃ
আপনার স্বামী/ স্ত্রীর সাথে ঝগড়া না মতের মিল হচ্ছে না হয়তো! কিন্তু তাই বলে অফিসে এসে দুজন দুদিকে মুখ করে বসে থাকবেন না বা এমন কোন আচরণ করবেন না যাতে অফিসের অন্যান্যরা বুঝে যায় যে আপনাদের মাঝে সমস্যা চলছে। নিজেদের মাঝে সমস্যা হলেও চেষ্টা করুন অফিসে স্বাভাবিক আচরণ করতে। নয়ত আপনাদের কাজের ক্ষতি, অফিসের কলিগদের চোখেও ছোট হবে আপনাদের সম্পর্ক। আর একটা কাজ কখনোই করবেন না। কলিগদের সাথে যত ভালো সম্পর্কই থাকুক, নিজেদের ঝগড়া নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবেন না।
আলাদা ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করুনঃ
খুব ভালো হয় যদি একই অফিস হলেও আপনাদের কাজের ক্ষেত্র আলাদা করে নিতে পারেন। আমরা না চাইলেও সঙ্গীর ওপরে অবচেতন ভাবেই আমরা এক ধরনের অধিকারের চর্চা করি। যা অনেক সময় ক্যারিয়ারের বা কাজের গতির জন্যে সমস্যাদায়ক হতে পারে। তাই কাজের ক্ষেত্র আলাদা থাকলে এ ধরনের সমস্যা কম হবে।
কাজ চাপিয়ে দেবেন না বা নিজেও নেবেন নাঃ
সঙ্গী একই অফিসে কাজ করেন বলে তার ওপর কাজ নিজের কাজ চাপিয়ে দেবেন না তার কাজ অতি ভালোবেসে নিজের ঘাড়ে নেবেন না। বিশেষ কোন সমস্যা না হলে এটা না করাই ভালো।
স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুনঃ
সঙ্গীর পদ, সাফল্যকে নিজের বলে চালিয়ে দেয়া বা তার পরিচয়ের পরিচয়ে বড় হবার চেষ্টা করা ঠিক নয়। চেষ্টা করুন নিজে কিছু করার, ব্যতিক্রম কিছু করার।
গুজবে কান দেবেন নাঃ
অফিসে কিছু কলিগ হয়তো আপনাদের এই সম্পর্কে খুশী নাই থাকতে পারে, তাই তারা নানা ধরনের গুজব আপনাদের নামে রটাতে পারে। ভুলেও এসবে কান দেবেন না। এসবের ওপর ভিত্তি করে সঙ্গীকে অবিশ্বাস বা সন্দেহ করবেন না।
আপনি যদি আপনার সহকর্মীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে থাকেন, তবে আপনি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবান। শুধু পারিবারিক জীবনেই নয়, একটু খানি যত্নবান আর সতর্ক থাকলেই পেশাগত জীবনেও আপনারা পরস্পর হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে পারেন বহুদূর।
Tidak ada komentar: সহকর্মী যখন জীবনসঙ্গী...
Posting Komentar