কল্লোলিনীর বুকে এখন দহন বেলার দীর্ঘ দীর্ঘ শ্বাস। কালবৈশাখি তাকে মাঝেসাঝে মাতিয়ে দিয়ে যায় বটে, ভিজিয়েও যায় শরীর ছুঁয়ে মন- কিন্তু সে আর কতক্ষণ! সময় ফুরালেই ফুরিয়ে যায় ভেজার আদর খেলা। তখন চাতকীর মতো বুকজোড়া তৃষ্ণা নিয়ে চোখ চায় মেঘের নীল, মন বলে, কবে আসবে বারিধারার বেলা? সে যে ভিজতে চায়। তবে উপায়? তার তরেই আসর সাজিয়েছে শহর পাঁচতারা পুলে, আকাশের নীলকে ভুলে শহরবাসীও শরীরে তুলে নিয়েছে পুলের পার্টিতে নীল জলের পরশ। সেখানে দাবদাহের শান্তি মিটিয়ে নতুন করে জ্বালা ধরাতে তৈরি প্রশান্ত অ্যাকুয়ামেরিন জলরাশি; সঙ্গে মনকে চঞ্চল করার জন্য চারপাশে ঢিমে আলোর রঙবাহারি কেতা। সেখানে ডিজে-র গানে মেতে উঠছে মনের একতারার তান আর জলের ধারে সারিবদ্ধ চেয়ার-টেবিল জোড়া ভিনদেশি খাবার-পানীয়ের ঢালাও আয়োজন! ভাবছেন কী করবেন? ভিজিয়ে যাওয়ার ডাকে সাড়া দেওয়াই তো ভাল!
হরিণী তন্বী হোন বা দৃপ্ত পৌরুষে ভরপুর, এই গরমে চোখ ধাঁধানো স্যুইমিং কস্টিউমটি পরে পুল পার্টিতে ভেজাতে পারেন গা; মনও সঙ্গে যাবে ভিজে। কিম্বা খেলে নিতে পারেন বিভিন্ন ‘ওয়াটার গেম’; কিছু পরে চলতি হেভি বিট-এর গানে শরীরকে কিছুটা দুলিয়ে নিয়ে মিঠে চমুক দিতে পারেন প্রিয় পানীয়তে! এটাই তো পুল পার্টি! চলতি হাওয়ায় শহর কলকাতার রাতপাখি বা পার্টি হপারদের এই মরসুমের সেরা ঠেক এই পুল পার্টি-ই। নাইট ক্লাব আর বার-এর দরজা তাড়াতাড়ি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তিলোত্তমার পার্টি হপারেরা বেছে নিচ্ছেন এই ‘মাইন্ডব্লোয়িং’ পুল পার্টিকে। আপনিও যদি হুল্লোড়ে গা ভাসাতে চান, কী উপায়? শহরের কোথায় কোথায় চলছে এহেন পুল পার্টি?
সম্প্রতি ‘সুইসোটেল’-এর পুল ‘মায়া’-তে হয়ে গেল একটি বড়সড় পুল পার্টি। ডান্স ফ্লোরে নাচের তালে তাল মেলানোর সঙ্গেই অতিথিরা ভোজন করলেন মনপসন্দ কন্টিনেন্টাল আর চাইনিজ খাদ্য। আনলিমিটেড ভদকা, হুইস্কি আর ডিজে-র গানের কারিকুরিতে কলকাতার হট চিক্সরা তো মজা পেয়েছেনই, পরের বারে গেলে ভাল লাগবে আপনারও। প্রতি মাসেই চিল আউট করতে পারেন নেওটিয়া বিস্তা-র এই মায়ার পুল পার্টিতে।
এছাড়াও পুল পার্টি হয় কলকাতার হরেক জায়গাতেই। এই যেমন দ্য পার্ক হোটেলের ‘অ্যাকোয়া’-তে গরম পড়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় পুল পার্টি। ডিজে-র গানে আর ঠান্ডা জলে গা ভিজিয়ে যেমন মন ভরবে, তেমনই পেট ভরানোর জন্যেও পেতে পারেন যে কোনও প্রিয় পদ। যেতে পারেন পিয়ারলেস হাসপাতালের পাশের ‘উপহার’ কম্পলেক্সের ক্লাব ভার্ড ভিস্তার পুল পার্টিতেও; সদ্য সেখানে একটি পুল পার্টির রেশ শেষ হয়ে গেলেও তক্কে তক্কে থাকুন পরের বারের জন্য। পিগি ব্যাঙ্ক বা ওয়াটার রেলের মতো গেমও খেলা যাবে সেখানে। আর বলিউডি হাই বিটের গানের সঙ্গে ড্রাগন স্প্রিং রোল ও হানি গ্লেজড চিকেন আর ইচ্ছে মতো সুরায় সিপ দেওয়ার সুযোগ তো আছেই।
আকাশ ছুঁয়ে যদি করতে চান পুল পার্টি, তবে চলে যেতে পারেন গড়িয়াহাট প্যান্টালুন্সের পাশেই ‘পার্ক প্লাজা’-র ‘স্মোক শ্যাক’-এ। জাকুজিওয়ালা পুলে পার্টি করতে পারেন ঈষৎ উষ্ণ গরম জলের বডি মাসাজ নিতে নিতে, পাশাপাশিই বার-বি-কিউ রেস্তোরাঁও হাজির! পেট ভরিয়ে সেরা হিট গানের কলিতে নেচেকুঁদে ফুরফুরে করে নিতে পারেন শরীর-মন দুইই। ‘স্মোক শ্যাক’-এ হ্যাং-আউট করার সময় সন্ধে ৭টা থেকে রাত ১১.৩০ পর্যন্তই; দু’জনের খরচ ৪০০০ টাকার সামান্য বেশি! এখানকার পুল পার্টির একটা বড় বৈশিষ্ট্য হল এখানে চারপাশে গাঁকগাঁক করে গান বাজবে না; বাজবে কেবল আপনার কানে। গোয়া, মুম্বইয়ের পর এহেন ‘সাইলেন্ট নয়েজ পার্টি’ থিমের পুল পার্টি এবারে হাজির কলকাতাতেও। সকলেই কানের হেডফোনের ঝিনচ্যাক গানে ‘বডি ওয়েভ’ নাড়াতে পারেন, কিন্তু চলবে না জোরালো স্পিকারের গান। ক্রোম হোটেলেও হয়ে থাকে পুল পার্টি। সেখানে জলখেলার সঙ্গে ট্রাই করতে পারেন পর্ক চপ, টেন্ডারলন স্টেক কিম্বা তন্দুরি পমফ্রেট।
পার্টির হদিস তো না-হয় পেলেন, এবারে জেনে নিন পুল পার্টি করার কয়েকটি এক্সক্লুসিভ টিপ্স! মহিলাদের জন্য বলি, নিয়ন বিকিনির সঙ্গে লাইট শেডের টপ পরতে পারেন, যা ক্লামজি লাগার বদলে আপনাকে দেবে একটি ট্রেন্ডি লুক। মাথায় রাখবেন, পুল পার্টি যেতে হলে উপযুক্ত ইনারে প্রস্তুত করবেন নিজেকে অবশ্যই।
এছাড়া সকলের জন্যই টিপ্স, মনে রেখে ঘড়িটি ‘ওয়াটার রেসিসট্যান্ট’ পরবেন। চামড়ার ব্যাগ, জুতোর বদলে ক্রক্স, রবার স্যান্ডাল কিম্বা ফ্লোটার্স পরাটাই ভাল। দিনের বেলায় পার্টি করতে হলে সানগ্লাস অবধারিত নিয়ে যাবেন। মেক-আপটিও যেন একটু লাউড ও ‘ওয়াটার রেসিসট্যান্ট’ হয় খেয়াল করবেন। মিনি পাউচ ধরনের সাইড ব্যাগ নিতে পারেন স্যুইমিং ওয়্যারের সঙ্গে ম্যাচ করে; অকেশনের সঙ্গে বেশ মানানসই লাগবে।
এবারে আঁট-ঘাট বেঁধে নেমে পড়ুন তো পুলে; পার্টি করুন মন ভরে!
Tidak ada komentar: গভীর জলের মায়া
Posting Komentar