দৃশ্যপট-১ : পৃথা ও সজীবের সম্পর্কের বয়স প্রায় দু বছর। কিন্তু এই দু বছরে ওদের সম্পর্কে চিড় ধরেছে কমপক্ষে বিশ বার! কারণ? কারণ আর কিছুই না, সজীবের মেয়ে বন্ধুদের জড়িয়ে সজীবকে পৃথার অমূলক সন্দেহ! সজীব যতই বোঝানোর চেষ্টা করে তারা শুধুই বন্ধু বা সহপাঠী, পৃথার মন মানে না কিছুতেই। ফলাফল, সম্পর্কে সমস্যা!
দৃশ্যপট-২ : রিয়া ও অণর্বের সম্পর্ক প্রায় তিন বছর হতে চললো। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দুজনেই পুরোদমে চাকরি করছে। ফলে আগের মতো একজন আরেকজনকে সময় দিতে পারে না তেমন। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত থাকে বলে গভীর রাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলাও হয় না আগের মতো। অফিস শেষে সন্ধ্যার পর মাঝে মাঝে দেখা অথবা ছুটির দিনে বেড়াতে যাওয়া - সময় কাটানো বলতে এতটুকুই। অর্ণব প্রায়ই অফিস শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়। মাঝে মাঝে ছুটির দিনেও বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে পড়ে। রিয়ার যাবতীয় অভিযোগ এখানেই, অর্ণব ওকে সময় দেয় না! বন্ধুদের জন্য অর্ণবের সময় আছে, রিয়ার জন্য নেই। অভিযোগ খণ্ডাতে খণ্ডাতে অর্ণব ক্লান্ত। আর কত! মানসিক দূরত্ব বেড়ে যেতে থাকে দুজনের মধ্যে...।
উপরের ঘটনা দুটো পরিচিত ঠেকছে? পরিচিত কারো গল্পের সাথে মিলে যায় অথবা আপনার নিজের গল্পের সাথেই? প্রেমের সম্পর্কে এসব ঘটনা ঘটে হরহামেশাই। কিন্তু সম্পর্কের ভাঙন অথবা দূরত্বের কারণ হিসেবে এই ছেলেমানুষী কারণগুলোকে মেনে নেয়া যায় না কিছুতেই! সম্পর্কে টানাপোড়েন থাকবেই। কিন্তু তা যেন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে না যায় কিছুতেই। বিশেষ করে প্রেমিকারা যদি ধৈর্য না ধরে ক্রমাগত অভিযোগ করতে থাকেন, তাহলে প্রেমিকরা তা সামলাতে পারেন না কিছুতেই। তাই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে সংবেদনশীল হতে হবে আপনাকেই। কারণ আপনি না চাইলে আপনার সঙ্গীর সাধ্য নেই আপনাকে ধরে রাখার।
ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা তুলনামূলক ভাবে ধীরস্থির ও শান্ত স্বভাবের হয় জিনগতভাবেই। তাই যখন একজন প্রেমিকা তার সম্পর্কের ব্যাপারে অস্থিরতা বা উদ্বেগ প্রকাশ করেন তা প্রেমিকের পক্ষে অনেক সময় বোধগম্য হয় না। আপনার উদ্বেগের কারণ যদি হয় সন্দেহ তাহলে সেটা আপনার প্রেমিক গুরুত্ব নাও দিতে পারেন। আপনার সন্দেহের কারণ তাঁকে খুলে বলুন। আবার যেহেতু সব মানুষ এক রকম নয়, তাই সবার বোঝার ক্ষমতাও এক থাকে না। যেমন আপনি হয়তো আপনার প্রেমিকের সাথে একটু বেশি সময় কাটাতে চান, কিন্তু তিনি হয়তো আপনার ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ বুঝতেই পারছেন না! তাঁকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে না বলে বরং সরাসরি বলুন যে আপনি কী চান।
একই বয়সী দুজন ছেলেমেয়ের মধ্যে ছেলেটির তুলনায় মেয়েটি মানসিক বয়স দু বছর বেশি থাকে। অর্থাত্ মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় মানসিকভাবে পরিপক্ব হয় আগে। এই পরিপক্বতার পার্থক্য অনেক সময় প্রেমের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে সমবয়সীদের ক্ষেত্রে। আপনি হয়তো আপনার প্রেমিকের কাছ থেকে আরেকটু রোমান্টিক আচরণ আশা করেন। কিন্তু তিনি হয়তো তা বুঝেই উঠতে পারেন না! আপনাকে তিনি ভালবাসেন বটে তবে সেটার প্রকাশভঙ্গি হয়তো ঠিক প্রেমিকসুলভ না হয়ে বন্ধুসুলভ হয়ে যায়। এসব ব্যাপারে মান-অভিমানে না গিয়ে বরং ধৈর্য ধরাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তাঁকে বুঝিয়ে বলুন, যে অন্য সবার থেকে আপনার সাথে তাঁর সম্পর্ক আলাদা। অহেতুক রাগারাগি না করে কৌশলী হোন।
আপনার প্রেমিক হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে ভালবাসেন। এমনকি আপনাকেও হয়তো নিয়ে যান আড্ডায়। সেখানে ছেলেবন্ধুদের পাশাপাশি মেয়েবন্ধুরাও থাকবে এটা কিন্তু খুবই স্বাভাবিক। সবাইকে আপনার পছন্দ হবেই, তা নয়। কিন্তু তাই বলে তাঁদের সাথে কথা বলা বা মেলামেশা করতে আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে বাধা দেন, সেটাও কিন্তু অন্যায় আচরণ হবে। বিশেষ এসব করে সন্দেহ বা ঝগড়া করা কিন্তু নিচু মনেরই পরিচয় দেবে! যার ফলে আপনি আপনার প্রেমিকের আস্থা হারিয়ে ফেলতে পারেন। ব্যাপারটা কি ভালো হবে? মাথা গরম না করে তাঁকে খোলাখুলি বলুন যে তাঁর বন্ধুদের কোন আচরণটা আপনার ভালো লাগেনি। প্রয়োজনে আপনি তাঁর সাথে আড্ডায় যাওয়া বাদ দিন, কিন্তু তাঁকে বাধা দেবেন না। বন্ধুরা দীর্ঘদিনের পুরোনো হলে আপনার প্রেমিক বাধা নাও মানতে পারেন। এতে আপনার যেমন খারাপ লাগবে, তেমনি সম্পর্কেরও অবনতি ঘটবে।
'সম্পর্ক' ব্যাপারটাই এমন যে তা খুবই স্পর্শকাতর। প্রেমের সম্পর্ক তো আরো বেশি! তাই এ সম্পর্কে বোঝাপড়া ও বিশ্বাস থাকা খুবই জরুরি। সন্দেহের বীজ এ সম্পর্কের মূল ভিত বিশ্বাসে ফাটল ধরায়। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রমাণ পাচ্ছেন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রেমিককে অহেতুক সন্দেহ করবেন না। কোনো বিষয়ে খটকা লাগলে ধৈর্য ধরে মূল ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করুন। এক তরফা আক্রমণ না করে আপনার প্রেমিকের বক্তব্যও শুনুন। হতে পারে আপনারই বোঝার ভুল! রাগের মাথায় এমন কোনো আচরণ করবেন না যাতে সম্পর্কে জটিলতা বাড়ে।
প্রেমিকারা মনে রাখুন :
- কিছু কিছু ব্যাপারে প্রেমিককে ছাড় দেয়ার মানসিকতা গড়ে তুলুন। সেই সাথে আত্মসংবরণ করার ক্ষমতাও বাড়িয়ে তুলুন।
- সম্পর্কে সমস্যার সৃষ্টি হলে এ ব্যাপারে প্রেমিকের মতামত ও যুক্তি মন দিয়ে শুনুন। আলোচনার সময় যে বিষয়ে কথা হচ্ছে সে বিষয়েই কথা বলুন। অন্য বিষয় টেনে আনলে তাতে শুধু তিক্ততাই বাড়বে।
- একই বিষয় নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করাটা অনেকে পছন্দ করেন না। একই কথা প্রেমিককে অনবরত বলতে থাকবেন না।
- রাগকে 'না' বলুন। আপনার অতিরিক্ত রাগ থেকেই সম্পর্কে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। এই রাগের কারণেই তুচ্ছ বিষয় বড় ধরনের বিপর্যয়ের আকার ধারণ করে।
- প্রেমিকের প্রতি আস্থা রাখুন। অন্যের সাথে তাঁর মেলামেশা ও কথাবার্তার প্রতি উদার দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিন।
- সম্পর্কে হাজারটা প্রতিবন্ধকতা, চড়াই-উত্রাই আসবেই। কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। তাই ঝোঁকের মাথায় সম্পর্ক ভাঙার সিদ্ধান্ত নেবেন না বা বারবার এ ধরনের হুমকি দেবেন না।
- মাঝে মাঝে ঝগড়া হতেই পারে! তবে এ ক্ষেত্রেও মাথা ঠান্ডা রাখুন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাঁকে বুঝিয়ে বলুন। ক্ষোভ পুষে রাখবেন না। ঝগড়ার সময় পুরনো প্রসঙ্গ টেনে আনবেন না।
- সমস্যার সমাধান করতে তৃতীয়পক্ষ বা কোনো বন্ধুর দ্বারস্থ না হওয়াই ভালো! একান্তই সামলাতে না পারলে দুজনের 'কমন' বন্ধুর সাহায্য নিন। আপনার একার বন্ধু বা তাঁর একার বন্ধুকে এর মধ্যে টেনে আনবেন না।
- প্রেমিকের মানসিক পরিপক্বতা আপনার চেয়ে কম হলে 'তুমি এখনো বাচ্চা', 'তুমি কিছুই বোঝো না' এসব বলে তাঁকে খোটা দেবেন না। এতে তিনি নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে পারেন এবং এটা সম্পর্ক ভাঙার কারণও হয়ে উঠতে পারে।
- প্রেমিকের দৃষ্টি আকর্ষণ বা মনোযোগ পাওয়ার জন্য অন্য কারো সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার ভান করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা থাকে।
- মেয়েরা সহজে 'ভালবাসি' বলতে চায় না, অথচ ছেলেরা শুনতে চায়! আপনার ভালবাসা ও অনুভূতির কথা তাঁকে কারণে-অকারণে জানাতে থাকুন। আপনার এই পদক্ষেপ তাঁকে আপনার আরো কাছাকাছি নিয়ে আসবে।
- প্রেমিকের দেয়া উপহার যদি পছন্দ নাও হয় তাঁকে বলবেন না। এমনকি টেরও পেতে দেবেন না। কারণ এই উপহার তাঁর ভালবাসার প্রকাশ, এটা নিয়ে নেতিবাচক কিছু বললে তিনি দমে যেতে পারেন।
- প্রেমিক চাকরিজীবি হলে তাঁর সময়ের মূল্য দিন। সময় দিতে পারেন না বলে তাঁকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবেন না।
- মনোমালিন্য ঘটলে মিটমাটের জন্য আপনার প্রেমিককেই সবসময় এগিয়ে আসতে হবে কেন? মাঝে মাঝে আপনিও এগিয়ে যান। দোষ যদি তাঁর হয় তবুও আপনি 'স্যরি' বলুন। দেখবেন এতে তিনি নিজেই অন্তর্দহনে ভুগবেন এবং পরের বার আর ওই একই বিষয় নিয়ে ঝামেলা করবেন না!
- বিশ্বাসই সব সম্পর্কের ভিত। বিশ্বাস করতে একে-অপরকে জানাটাও জরুরি। তাই শুধু প্রেমিকের খবর না নিয়ে নিজের কাজকর্মের ব্যাপারেও তাঁকে জানান। তাঁর অপছন্দের কোনো কাজ লুকিয়ে করবেন না। এতে শুধু জটিলতাই বাড়বে।
Tidak ada komentar: প্রেমিকারা মনে রাখুন
Posting Komentar