Selasa, 26 November 2013

ধর্ষণের জন্য কে দায়ী?

Sexy Hot Photos: ধর্ষণের জন্য কে দায়ী? .

কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের সিপিআইএম (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া, মার্কসবাদ) বিধায়ক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা মেয়েদের সম্পর্কে কুৎসিত মন্তব্য করেছেন, শুনে সত্যি বলতে কী, আমি অবাক হইনি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের চেয়ে স্বভাবচরিত্রে সিপিআইএম খুব আলাদা নয়। সত্যিকার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারীদের সম্পূর্ণ সমানাধিকার নিশ্চিত। এ সম্পর্কে প্রচুর সিপিআইএম নেতা-সমর্থকদের কোনও ধারণা নেই। রেজ্জাক মোল্লারও নেই বলে তিনি অসমাজতান্ত্রিক, অশ্লীল এবং অসত্য একটি মন্তব্য করেছেন। এবং করেছেন ‘জামাতে ইসলামি হিন্দ’-এর জমায়েতে। আদর্শগত কারণে কোনও ধর্মীয় দলের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক থাকার কোনও কথা নয়। কিন্তু ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সত্যিকার কমিউজমের আদর্শ থেকে লক্ষ যোজন দূরে।রেজ্জাক মোল্লা বলেছেন, ‘জিনস আর টপ পরে বেরোলে মেয়েদের নিগ্রহ অনিবার্য, ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির শিকার হলেও তাদের নালিশ করা উচিত নয়, পোশাকই মেয়েদের বিপদ ডেকে আনে’। …এই কথাগুলো রেজ্জাক মোল্লার একার কথা নয়, এগুলো প্রায় সব পুরুষের মনের কথা। অন্য পুরুষেরা আজকাল এসব কথা মুখে না বললেও মনে মনে বলে। রেজ্জাক মোল্লার চোখ কান অত খোলা নেই বলে ফস করে বলে ফেলেছেন, জানেন না যে আজকাল ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতাকে দায়ী করাটা ‘পলিটক্যালি ইনকারেক্ট’। বহু বছর ধরে নারীবাদীরা পৃথিবীর সর্বত্র সবাইকে বোঝাচ্ছে, এমনকী প্রমাণও দেখাচ্ছে যে, ধর্ষণ নারীর পোশাকের কারণে ঘটে না। ধর্ষণের কারণ : ১. বীভৎস কোনও কাণ্ড ঘটিয়ে পুরুষ তার পৌরুষ প্রমাণ করে, ২. নারীকে নিতান্তই যৌনবস্তু মনে করে পুরুষ। সুতরাং যৌনবস্তুকে ধর্ষণ করা অপরাধ নয় বলেই বিশ্বাস করে।


নারীবাদীদের আন্দোলনের ফলে ধর্ষণের জন্য ধর্ষিতাদের দায়ী করাটা সভ্য এবং শিক্ষিত লোকদের মধ্যে এখন অনেকটা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু যারা এখনও বন্ধ করছে না, তাদের নিশ্চিতই চক্ষুলজ্জা বলতে যে জিনিসটা প্রায় সবার থাকে, নেই। পশ্চিমবঙ্গের অনেকে রেজ্জাক মোল্লার মন্তব্যের প্রতিবাদ করলেও বর্তমান তৃণমূল সরকারের কেউ কোনও প্রতিবাদ করেনি। সম্ভবত আগামী নির্বাচনে ধর্ষকদের ভোট আবার যদি না জোটে, এই ভয়ে।


রেজ্জাক মোল্লা বলেছেন, পুরুষের ‘কুনজর’ থেকে বাঁচতে মেয়েদের শপিং মলে যাওয়া বন্ধ করা উচিত। রেজ্জাক কিন্তু পুরুষদের উপদেশ দেননি তাদের ‘কুনজর’ বন্ধ করার জন্য। সম্ভবত এতদিনে তিনি বুঝে গেছেন পুরুষ-জাতটা খারাপ। তো এই খারাপ-জাতকে ভালো করার তাঁর মোটেও ইচ্ছে নেই। বরং ভালো-জাত নারী-জাতকে উপদেশ দিয়েছেন খারাপ-জাত থেকে গা বাঁচিয়ে চলার জন্য। মোল্লার বিবৃতি যত না নারীবিরোধী, তার চেয়ে বেশি পুরুষবিরোধী। তিনি পুরুষদের ভালো মানুষ বলে মনে করেন না। পুরুষেরা নিজের যৌনইচ্ছেকে সংযত করতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করেন না। তাদের ‘কুনজর’কে সুনজর করার কোনও উপায় আছে বলে তিনি মানেন না। পুরুষবিরোধীরা যেমন পুরুষকে শুধুই কামুক, শুধুই লম্পট, শুধুই ধর্ষক, লিঙ্গসর্বস্ব, শুধুই অসৎ, অবিবেচক বলে মনে করে, রেজ্জাক মোল্লাও তেমন মনে করেন। এই পুরুষবিরোধীরাই পুরুষের ‘কুনজর’ থেকে বাঁচতে মেয়েদের বোরখা পরার উপদেশ দেয়।


খাপ পঞ্চায়েতের মোড়লদের সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রেজ্জাক মোল্লার কোনও পার্থক্য নেই। পার্থক্য হিন্দু মুসলমানেও নেই। মেয়েদের অপদস্থ আর অপমান করতে, মেয়েদের অসম্মান করতে, অত্যাচার নির্যাতন করতে দুই সম্প্রদায়ই সমান পারদর্শী। যখন তাঁর বক্তব্যের নিন্দা হচ্ছে খুব, রেজ্জাক মোল্লা বললেন যে তিনি যা বলেছেন মুসলমান মেয়েদের সম্পর্কে বলেছেন, অমুসলমান মেয়েদের সম্পর্কে কিছুই বলেননি। বেফাঁস মন্তব্য করে, বেগতিক দেখে, এখন নিজের ধর্মের গুহায় আশ্রয় নিয়েছেন। ধর্মের গুহা সবসময়ই খুব নিরাপদ কি না। মুসলমান মেয়েদের সম্পর্কে বলেছেন কারণ নিশ্চয়ই তিনি মনে করেন মুসলমান মেয়েদের নিয়ে যা কিছু মন্তব্য করার অধিকার তাঁর আছে। আজ তাদের সালোয়ার কামিজ পরার উপদেশ দিচ্ছেন, কাল তাদের বোরখা পরার উপদেশ দেবেন। ‘অর্ধেক আকাশ’কে কালো মেঘে ঢেকে দিতে তাঁর কোনও আপত্তি নেই।


সিপিআইএম-এর চরিত্র বলে এখন আর কিছু নেই। আমার মতো একজন ধর্মমুক্ত মানববাদী লেখককে রাজ্য থেকে দূর দূর করে যারা তাড়াতে পারে, তারা ধর্মীয় মৌলবাদীদের সঙ্গে একই সুরে কথা বলবে, অবাক হওয়ার কী আছে! মেয়েদের যৌন হেনস্থার জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করা মানে মেয়েদের পছন্দ মতো কাপড় চোপড় পরার স্বাধীনতাকে ধর্ষণ করা। সত্যি কথা বলতে, সেদিন রেজ্জাক মোল্লা মেয়েদের স্বাধীনতা আর অধিকারকে জনসমক্ষে ধর্ষণ করেছেন।’নারীর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার অভিযানে’ নেমে রেজ্জাক মোল্লা বলছেন, ‘এখন যারা প্যান্ট-গেঞ্জি-টপ পরছে তারা গোল্লায় যাক। আপনারা সালোয়ারের উপরে উঠবেন না। এই বিষয়গুলি টেনে না ধরলে বিপদ। আমরা বাড়ির দুই মেয়ের একজন ডবলিউবিসিএস এবং একজন সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার। তাদের দু’জনকে সালোয়ার-কামিজের মধ্যে ধরে রেখেছি।’ তিনি তাঁর কন্যাদের সালোয়ার-কামিজের মধ্যে ধরে রেখেছেন, এর মানে তাঁর কন্যাদের অধিকার নেই তাদের পছন্দের পোশাক পরার। কারণ তিনি মেয়েদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। পুরুষ সিদ্ধান্ত নেবে মেয়েরা কী পোশাক পরবে। এসব বলে কমিউনিস্ট নেতা আরও স্পষ্ট করলেন যে তিনি নিজ বাসভূমে এক উৎকট পিতৃতন্ত্র আর স্বৈরতন্ত্র বহাল রেখেছেন। এ কম লজ্জার নয়। তার ওপর আবার কতটুকু নির্লজ্জ হলে রাজ্যের বা দেশের মেয়েরা কী পোশাক পরবে, তা নির্ধারণ করতে নামেন! কোন পোশাক শালীন, কোন পোশাক শালীন নয় তাও বেশ ঘোষণা করে দেন। মেয়েদের বেলায় শুধু শালীনতা অশালীনতার প্রশ্ন ওঠে কেন! তিনি তো কোনও পুরুষের কোন পোশাক শালীন, কোন পোশাক অশালীন তা বলেন না! তাঁর বাড়ির বা পাড়ার পুরুষেরা খালি গায়ে লুঙ্গি বা গামছা পরে তাঁর চোখের সামনে প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি করে না! তিনি নিজেও নিশ্চয়ই করেন। কখনও কি মনে হয়েছে লুঙ্গি শালীন পোশাক নয়, খালি গা শালীন নয়, গামছা পরা অশ্লীল? যে কারণে একটি মেয়ের জিনসকে তিনি অশালীন বলছেন, সে কারণে একটি ছেলের জিনসকে তিনি অশালীন বলছেন না কেন? যে কারণে একটি মেয়ের টিশার্ট অশালীন, সে কারণে একটি ছেলের টিশার্ট কেন অশালীন নয়? শালীনতার সংজ্ঞা তৈরি করার দায়িত্বটি কার? পুরুষের? রেজ্জাক মোল্লাদের?


আধুনিক পোশাকের বদলে রবীন্দ্র-যুগের ঠাকুরবাড়ির পোশাকের পক্ষপাতী রেজ্জাক মোল্লা। বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের আমলে যে ড্রেস-কোড ছিল তা সঠিক বলে মনে করি।’ রবীন্দ্রনাথের বাড়িতে মেয়েরা শাড়ির সঙ্গে লম্বা হাতের ব্লাউজ পরতেন, কেউ কেউ মাথায় ঘোমটাও দিতেন। সেই পোশাকই রেজ্জাক চাইছেন এখনকার মেয়েরা পরুক। আধুনিক মেয়েরা ফিরে যাক উনবিংশ শতাব্দীর পোশাকে।


শাড়ির প্রতি হিন্দু হোক মুসলিম হোক, পশ্চিমবঙ্গের সব রক্ষণশীল মানুষেরই পক্ষপাত। ইস্কুলের শিক্ষিকাদের ক’দিন পর পরই ড্রেস-কোড দেওয়া হয়, সালোয়ার কামিজ চলবে না, সবাইকে শাড়ি পরতে হবে। অশালীন বলতে যদি শরীরের ত্বক প্রকাশ হওয়াকে বোঝানো হয়, তবে শাড়ি সবচেয়ে অশালীন পোশাক। এবং সবচেয়ে শালীন পোশাক প্যান্ট-শার্ট। শাড়ি পরে দৌড়ঝাঁপ করা, দৌড়ে বাসে ট্রামে ট্রেনে উঠা ঝামেলা, শাড়িতে টান পড়লে শাড়ি খুলে পড়বে। শাড়ি ভারতীয় উপমহাদেশের আদি পোশাক। আমাদের পূর্বনারীরা যখন শাড়ি পরতেন, তখন কিন্তু সঙ্গে সায়া-ব্লাউজ পরতেন না। সে নিশ্চয়ই ‘অশালীনতার’ চূড়ান্ত। সবকিছুর বিবর্তন হয়, কাপড় চোপড়েরও। বিবর্তনে যাদের বিশ্বাস নেই, তারা হাতের কাছে যা পায়, তা-ই অাঁকড়ে ধরে, তা নিয়েই অনন্তকাল কাটিয়ে দিতে চায়।


রেজ্জাকের বক্তব্য, ‘লেখাপড়া করা মানে প্যান্ট-টপ পরতে হবে এমন নয়, আপনারা শপিং মলের মতো জায়গায় যাবেন না।’ কমিউনিস্ট নেতা মৌলবাদী নেতার মতো কথা বলছেন, মেয়েরা কী পরবে না, কোথায় যাবে না, তা বলে দিচ্ছেন। এর অন্যথা হলে বিপদ হবে, তারও হুমকি দিচ্ছেন। মেয়েদের শুধু পুরুষের সম্পত্তি নয়, এই সমাজেরও ব্যক্তিগত সম্পত্তি বলে বিশ্বাস করা হয়। সে কারণে সমাজের লোকেরা একটা মেয়ে কী পরলো, কী করলো, কোথায় গেল, কী খেলো, কার সঙ্গে কথা বললো, কার সঙ্গে শুলো, কখন বাড়ি ফিরলো এসবের খবরাখবর রাখে। লক্ষ্মণরেখা পেরোলেই সর্বনাশ। সমাজের লোকেরাই সিদ্ধান্ত নেবে মেয়েকে একঘরে করতে হবে নাকি পাথর ছুঁড়ে মারতে হবে। মেয়েদের শরীরকে অর্থাৎ মেয়েদের যৌনতাকে শেকল দিয়ে বেঁধে ফেলার আরেক নাম পুরুষতন্ত্র। এই শেকল যতদিন না ভাঙা হবে, ততদিন মেয়েদের সত্যিকার মুক্তি নেই, ততদিন তাদের পোশাক আশাক আর তাদের চলাফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলতে থাকবে।


রেজ্জাক মোল্লা আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক নারীবিরোধী সমাজের যোগ্য প্রতিনিধি। তিনি আজ পুরুষদের একরকম আহ্বানই জানালেন টপ জিনস পরা মেয়েদের ধর্ষণ করার জন্য। বলেছেন টপ জিনস পরা ধর্ষিতারা যেন ধর্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না করে, কারণ ধর্ষিতারা নিজেদের ধর্ষণের জন্য দায়ী, ধর্ষকরা নয়। এখন পঙ্গপালের মতো পুরুষেরা নেমে পড়বে রাস্তা-ঘাটে ঘরে-বাইরে শপিং মলে, নির্দ্বিধায় নিশ্চিন্তে মেয়েদের ধর্ষণ করবে। রাজনীতির হর্তা-কর্তাদের সম্মতি পেলে কে বসে থাকে!মূর্খ রাজনীতিবিদরা সমাজকে যত নষ্ট করে, তত নষ্ট সম্ভবত ধর্ষকরাও করে না। ধর্ষকদের দোষ দিয়ে ধর্ষণের মূল কারণকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। ধর্ষক হয়ে কেউ জন্মায় না। এই পুরুষতন্ত্র, পিতৃতন্ত্র, সমাজের কুশিক্ষা, ভুল শিক্ষা, নারী-বিদ্বেষ, নারী-ঘৃণা পুরুষকে ধর্ষক বানায়। ধর্ষিতাকে দোষ দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ করা যায় না। ধর্ষককে ফাঁসি দিয়েও ধর্ষণ বন্ধ করা যায় না। ধর্ষণের মূল কারণগুলোকে নিমর্ূল করতে পারলেই ধর্ষণ বন্ধ হবে।


শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, বাংলাদেশেও একই অবস্থা। বাংলাদেশের সমাজেও রেজ্জাক মোল্লাদের অভাব নেই। এরা শিক্ষিত পরিবারের শিক্ষিত লোক। কিন্তু মেয়েদের যৌনবস্তু ছাড়া আর কিছু ভাবতে এরা পারেন না। নারীবাদীদের শত বছরের আন্দোলনের ফলে পৃথিবীতে নারী শিক্ষা শুরু হয়েছে, নারীরা ভোটের অধিকার পেয়েছে, বাইরে বেরোবার এবং স্বনির্ভর হওয়ার অধিকার পেয়েছে, কিন্তু এই অধিকারই সব নয়, নারীর যে অধিকারটি নেই এবং যে অধিকারটি সবচেয়ে মূল্যবান, সেটি নারীর শরীরের ওপর নারীর অধিকার। নারীর শরীরকে সমাজের এবং পরিবারের দাসত্ব থেকে মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। নারীর শরীর কোনও সমাজের সম্পত্তি, বা কোনও পরিবারের সম্মানের বস্তু নয়। যতদিন নারী তার শরীরের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা না পাচ্ছে, নারীর শরীর নিয়ে নারী কী করবে, সেই সিদ্ধান্ত নারীর না হবে, যতদিন এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পুরুষের, আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজের, ততদিন নারীর সত্যিকার মুক্তি সম্ভব নয়। আর যতদিন এই মুক্তি সম্ভব নয়, ততদিন নারীর পরিচয় পুরুষের ‘ভোগের বস্তু’ হয়েই থাকবে_ ঘরে, পতিতালয়ে, রাস্তায়, অফিসে, বাসে, ট্রেনে_ সবখানে। ভোগের বস্তু নারীকে ভাবা হয় বলেই যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ ঘটাতে পুরুষের কোনও অসুবিধে হয় না। পুরুষাঙ্গ মেয়েদের ধর্ষণ করে না, ধর্ষণ করে ঘৃণ্য পুরুষিক মানসিকতা। পুরুষাঙ্গ নিতান্তই একটা ক্ষুদ্র নিরীহ অঙ্গ। পুরুষিক মানসিকতা দূর করলে পুরুষেরা নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে না দেখে একই প্রজাতির সহযাত্রী স্বতন্ত্র ব্যক্তি হিসেবে দেখবে। পুরুষের যৌনইচ্ছের চেয়ে নারীর যৌনইচ্ছে কিছু কম নয়। নারী যদি নিজের যৌনইচ্ছে সংযত করতে পারে, পুরুষের বিনা অনুমতিতে পুরুষকে স্পর্শ না করে থাকতে পারে, পুরুষ কেন পারবে না, পুরুষ কেন চাইলে নারীর বিনা অনুমতিতে নারীকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে পারবে না! মানুষ মাত্রই এই ইচ্ছেকে সংযত করতে পারে, কিন্তু ধর্ষকদের মধ্যে সংযত করার এই চেষ্টাটা নেই, কারণ ধর্ষকদের মস্তিষ্কের গভীরে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের শিক্ষাটা অনেক আগেই ঢুকে গেছে যে নারী যৌনবস্তু আর পুরুষের অধিকার আছে যখন খুশি যেভাবে খুশি যৌনবস্তুকে ভোগ করা। কিন্তু কে কাকে বোঝাবে যে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক যদি খাদ্য ও খাদকের বা শিকার ও শিকারীর হয়, তবে এ কোনও সুস্থ সম্পর্ক নয়! কোনও বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করে কখনও সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। নারী তার সমানাধিকার না পাওয়া পর্যন্ত নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনও সত্যিকার সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠবে না। সমানাধিকার কে দেবে নারীকে? যারা ছিনিয়ে নিয়েছে, তাদের দায়িত্ব নারীর অধিকার নারীকে ভালোয় ভালোয় ফিরিয়ে দেওয়া।

Related Posts: ধর্ষণের জন্য কে দায়ী?

Tidak ada komentar: ধর্ষণের জন্য কে দায়ী?

Popular Posts
Blog Archive