কিছুদিন ধরেই স্ত্রী আপনার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে না। আপনি অফিস থেকে এসে ক্লান্ত হয়ে এক কাপ চা চাইলেন, কিন্তু তিনি কার সাথে যেন ফোনে কথা বলতে গিয়ে বেমালুম ভুলে গেলেন। ইদানিং অফিস থেকেও সে বেশ দেরীতে ফিরছে বাসায় কিংবা নানান কারণে বাড়ির বাইরে সময় বেশি ব্যয় করছেন। খুব অল্পতেই আপনার উপর ক্ষেপে গিয়ে বিভিন্ন রকমের অভিযোগ তুলছেন। তাহলে কি আপনার প্রতি তার ভালোবাসাটা আগে মতো নেই? নাকি সে অন্য কাউকে মন দিয়ে ফেলছেন?
এমন সমস্যা ইদানিং ঘরে ঘরেই। বেশ কিছুদিন সংসার করার পর অনেক নারীই বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। বেশ কিছু পুরুষও তাদের নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিবাহিত নারীদেরকে এ ধরণের সম্পর্কের জালে জড়াচ্ছে।
সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বিবাহিত মহিলাদের প্রতারণার হার বিশ্বজুড়ে গত ২০ বছরের তুলনায় শতকরা ৪০ ভাগ বেড়েছে। ন্যাশনাল অপিনিয়ন রিসার্চ সেন্টারের এই সামাজিক জরিপে দেখা গেছে যে প্রতি ৬ জন স্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজন তাদের স্বামীর সাথে প্রতারণা করে। ১৯৯১ সালে এই হার ছিলো প্রতি ১০ জনে ১ জন।
প্রতারণার কারণ
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াসিংটনের সমাজবিদ পিপার স্কয়ার্টজের মতে প্রতারণার হার বাড়ার পেছনে অন্যতম কারণ হলো নারীর আর্থিক স্বাধীনতা। এছাড়াও সামাজিক মাধ্যম গুলোও নারী ও পুরুষের মধ্যে যোগাযোগ কে সহজ করে দিয়েছে। তাই বিবাহিত নারীরা আগের থেকে বেশি প্রতারণা করার সুযোগ পাচ্ছে।
এছাড়াও বিবাহিত নারীদের প্রতারণার আরো কিছু কারণ হলো দুশ্চরিত্র হওয়া, স্বামীর সাথে সুখী যৌন জীবন না পাওয়া, স্বামীর পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় না দেয়া, স্বামীর পূর্বের কোনো প্রতারণার প্রতিশোধ নেয়া, হিন্দি সিরিয়ালের প্রভাব, স্বামী যত্নশীল না হওয়া, বাচ্চা না হওয়া, মানসিক সমর্থন পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি।
কিভাবে বুঝবেন স্ত্রী প্রতারণা করছে?
- -আগে হয়তো কেউ ফোন করলে স্ত্রী আপনার সামনেই কথা বলতেন। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরেই লক্ষ্য করছেন যে ফোন বাজলেই তিনি দূরে গিয়ে কথা বলেন। কে ফোন দিয়েছে জিজ্ঞেস করলেও ক্ষেপে গিয়ে ঝগড়া লাগিয়ে দিচ্ছেন।
- -ফোনে কথা বলার অভ্যাসটাও যেন বেড়ে গেছে আগের চাইতে। কিংবা বেড়েছে কোনো বিশেষ পুরুষ আত্মীয়ের আপনার বাসায় আনাগোনা ও স্ত্রীর তার সাথে সময় কাটানো।
- -তার স্বভাবেও বেশ পরিবর্তন এসেছে হঠাৎ করেই। একটু কিছু হলেই ক্ষেপে যান, অতিরিক্ত খিটখিটে থাকে মেজাজ সারাক্ষন।
- -কম্পিউটার ব্যবহারের সময় আপনি আশে পাশে থাকলেও ইদানিং অস্বস্তি বোধ করছেন তিনি। মোবাইল ফোনে কাউকে হাত লাগাতে দিচ্ছেন না।
- -নানান অজুহাত দিয়ে প্রায়ই বাইরে কোথায় যেন যাচ্ছেন, আবার দেরী করেই ফিরছেন। আপনি শখ করে সঙ্গে যেতে চাইলেও বাঁধা দিচ্ছেন স্ত্রী।
আপনার স্ত্রীর মধ্যে যদি হঠাৎ করেই করেই এ ধরণের পরিবর্তন গুলো দেখা দেয় তাহলে আপনি আন্দাজ করে নিন যে আপনার স্ত্রী আপনার সাথে প্রতারণা করছে কোনো কিছু নিয়ে।
তাহলে কি করবেন?
- -আপনি যদি আপনার স্ত্রীর প্রতারণার প্রমাণ পান তাহলে আপনাকে প্রথমেই যেটা করতে হবে তা হলো স্ত্রীর নতুন সম্পর্কের গভীরতা বোঝার চেষ্টা করা। সম্পর্ক যদি প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে আপনার স্ত্রীকে বুঝিয়ে-শুনিয়ে এ ধরণের সম্পর্ক থেকে দূরে সরিয়ে আনার চেষ্টা করুন। রাগারাগি না করে ভালো ভাবে বুঝিয়ে বলুন যে এ ধরণের সম্পর্ক অনৈতিক এবং কোনো ভবিষ্যত নেই।
- -আর সম্পর্ক যদি বেশ গভীর হয়ে যায় তাহলে কেবল মাত্র কথাবার্তার মাধ্যমে সমাধানে আসার সম্ভাবনা কম থাকে। এক্ষেত্রে আপনার স্ত্রী আপনার সাথে রাগারাগি করবে এবং কথায় কথায় বিচ্ছেদের হুমকি দিবে। আপনি আপনার স্ত্রীর নতুন প্রেমিকের সাথে কথা বলে তাকে বুঝিয়ে বলুন যে তারা যা করছে সেটা অন্যায়। তাকে অনুরোধ করুন আপনার স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না করতে।
- -আপনার স্ত্রী যদি তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে তাহলে আপনার নিজের মনকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি চাইছেন। আপনি যদি স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিতে পারেন তাহলে তাকে আত্মশুদ্ধির সুযোগ দিন। আর যদি আপনি মনে করেন যে কোনো দিনই ক্ষমা করতে পারবেন না তাহলে তাকে সেটা বুঝিয়ে বলুন। তাকে বলুন যে তার প্রতারণা আপনি ক্ষমা করতে পারবেন না। তাই আপনি বিচ্ছেদ চাইছেন।
সম্পর্কে প্রতারণার হার বাড়ার সাথে সাথে বিচ্ছেদের হারও বেড়ে গেছে। স্বামী স্ত্রী দুজনেরই ব্যস্ততা, একে অপরকে সময় দিতে না পারা এবং সহনশীলতার অভাবের কারণে বিবাহিত জীবনে সুখ শান্তি নেই অনেক দম্পতিরই। আর এ ধরণের নানান রকম সমস্যা থেকেই শুরু হয় প্রতারণার সূত্রপাত। তাই প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অবস্থানে সততা বজায় রাখা উচিত এবং সাংসারিক ঝামেলা গুলো দুজন মিলে আলোচনা করে সমাধান করা উচিত। তাহলে প্রতারণা কিংবা বিচ্ছেদের মতো সামাজিক সমস্যা গুলো কমে যাবে অনেকটাই।
Tidak ada komentar: আপনার স্ত্রী কি পরকীয়ায় আসক্ত?
Posting Komentar