বিয়ে করেছেন প্রায় এক বছর হতে চলেছে। দুজনের সুখের সংসার। দুজনেই দুজনের কাছে কিছুই লুকান না। এমনকি আপনাদের পুরোনো প্রেমের সম্পর্কের কথাগুলোও বলেছেন একে অপরের কাছে। কিন্তু ইদানিং আপনার মনের ভেতরে একটু কেমন যেন খচখচ করছে "ওর" আগের সম্পর্কটা নিয়ে। যত দিন যাচ্ছে তত ব্যাপারটা নিয়ে আপনার ঘাঁটাঘাঁটি যেন বেড়ে গেছে। ইদানিং আপনি কারণে-অকারণে তাকে পুরানো সম্পর্ক নিয়ে দু চারটা কথাও শুনিয়ে দিতে ছাড়ছেন না। ফলাফল দাম্পত্য অশান্তি!
কেন হয় এই ঈর্ষা?
স্বামী বা স্ত্রীর পুরোনো প্রেমিক প্রেমিকা কে ছিলো, কেমন ছিলো, এখন কোথায় আছে এসব নিয়ে মাথা ঘামান না অনেকেই। কিন্তু হঠাৎ যদি মনের অজান্তেই আপনি সেই মানুষটিকে ঈর্ষা করে বসেন, তাহলে সেটা নিয়ে আপনাদের দুজনের সম্পর্কে অনেক ধরণের সমস্যা দেখা দিবে। আবার আপনি নিজেও যদি কেবল প্রাক্তন প্রেমের ব্যাপারেই কথা বলতে পারেন, সেটাও ধ্বংস করে ফেলে আপনার বর্তমানের সম্পর্কটিতে। আসুন, জেনে নেই প্রাক্তন প্রেমকে ঘিরে কেন জেগে ওঠে ঈর্ষা বোধ।
যখন সঙ্গী কিছু গোপন করেঃ
আপনার সঙ্গীটি যদি তার অতীত সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে গোপন করে কিংবা আপনাকে বলতে না চায়, তাহলে আপনার মনে ঈর্ষা ও সন্দেহের সৃষ্টি হতেই পারে। সঙ্গীকে বারবার তার অতীত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার পরও যদি সে বলতে না চায় বা কিছু লুকানোর চেষ্টা করে তাহলে নিজেদের অজান্তেই দাম্পত্যের ক্ষতি হয়। শামী/স্ত্রী আপনার অতীত সম্পর্কে জানতে চাইলে যতটা সম্ভব বলে দিন। আর তাকে অভয় দিন যে তিনি নির্দ্বিধায় বলতে পারে, আপনি কিছুই মনে করবেন না। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা মজবুত করার জন্যই অতীত জানাটা জরুরী, সেটা বুঝিয়ে বলুন। এবং অতীতের কথা জানার পর অবশ্যই রাগারাগি করবেন না।
তুলনা করাঃ
আপনি যদি সব কিছু নিয়েই নিজের প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার তুলনা করেণ তাহলে তাহলে আপনার সঙ্গীর মনে ঈর্ষা ও ক্ষোভ জন্মাবে এবং সেটা খুবই স্বাভাবিক। কারণে-অকারণে পুরোনো কথা টেনে আনবেন না, এতে কেবল সন্দেহেরই সৃষ্টি হবে। অনেকে ইচ্ছা করে সঙ্গীকে আঘাত করার জন্য প্রাক্তন প্রেমের কথা বলেন। এটা কখনোই করবেন না। তাতে আপনাদের বর্তমান সুখ চিরতরে শেষ হয়ে যেতে পারে।
বার বার অতীতের কথা বললেঃ
ধরুন আপনি সঙ্গীর সাথে ছাদে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। বেশ আবেগ নিয়ে তিনি বললেন, তোমার চোখ জোড়া খুব সুন্দর। এমন একটি সুন্দর মূহুর্তে হঠাৎ আপনি বলে বসলেন যে আপনার আগের ভালোবাসার মানুষটিও আপনার চোখ খুব ভালোবাসতো! ব্যাস, মনেরর মাঝে অশান্তি ও হিংসা ঢুকে যাওয়ার জন্য এই একটি কথাই যথেষ্ট। এরপর থেকেই তিনি নিজের অজান্তেই বারবার পুরোনো কথা তুলে খোঁচা দিবেন কিংবা অকারণে রাগারাগি করবেন। কেননা তাঁর মনে হবে তিনি আপনাকে কারো সাথে শেয়ার করছেন।
যোগাযোগঃ
নতুন জীবন শুরু করার পরও যদি প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে যোগাযোগ রাখেন, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই মনে জন্ম নিবে ঈর্ষা আর তখন দাম্পত্য জীবনে অশান্তি অবধারিত। একটা কথা মনে রাখবেন, প্রাক্তন মানুষটি এখন আর আপনার জীবনে নেই, কিংবা আপনাদের মাঝে ভালোবাসাও নেই। যে মানুষটি আপনার পাশে আছে, তিনিই আপনার বর্তমান। অতীতের মানুষের জন্য বর্তমানের মানুষটিকে কোনো ভাবেই আঘাত করা উচিত নয়।
কি করবেন এমন পরিস্থিতিতে?
এই ভয়ানক অশান্তির পরিস্থিতি যদি তৈরি হয়েই যায় আর সঙ্গীর সাথে চলতে থাকে নীরব মন কষাকষি, তাহলে দাম্পত্যের ভাঙ্গন অনিবার্য। এমনকি ডিভোর্স পর্যন্ত গড়িয়ে যাওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। তাই সময় থাকতেই করতে হবে সমাধান।
নিজেকে বুঝুনঃ
আপনি বোঝার চেষ্টা করুন যে ঠিক কোন ব্যাপারটি নিয়ে আপনার সমস্যা হচ্ছে। পুরো ব্যাপারটি নিয়ে বার বার চিন্তা করুন। ভেবে দেখুন ব্যাপারটিতে আপনার সঙ্গীর আদৌ কোনো দোষ আছে নাকি পুরো ব্যাপারটাই আপনার মনগড়া। সঙ্গী যদি আপনাকে সন্দেহ করে থাকেন, তাহলে সেটা দূর করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে বরং নানান ভাবে প্রকাশ করুন যে আপনি তাকে কত ভালোবাসেন। মুখে হাজার বার বললেও তাঁর সন্দেহ দূর হবে না, কিন্তু ভালোবাসার প্রকাশে তিনি আস্থা ফিরে পাবেন।
আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলুনঃ
আত্মবিশ্বাস একটি জরুরী বিষয়। আত্মবিশ্বাস না থাকলে হীনমন্যতায় ভুগতে হয় এবং সব কিছু নিয়েই হিংসা লাগা শুরু হয়। কিন্তু আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে পারলে এই সমস্যা অনেকটাই দূর করা যায়। একটা জিনিশ মনে রাখবেন, সঙ্গীর জীবনে আপনিই বর্তমান। আর অতটের মানুষটি আপনার চাইতে হাজার গুন ভালো হলেও তিনি কেবলই অতীত।
তুলনা করবেন নাঃ
নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা বন্ধ করুন। আপনার সঙ্গীটি আপনার, তার প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই আপনার গুরুত্ব তার কাছে অনেক বেশি সেটা সে প্রকাশ করুক বা না করুক। অন্যদিকে আপনি নিজেও সঙ্গীকে প্রাক্তন প্রেমের সাথে দাঁড়িপাল্লায় মাপতে যাবেন না। যে মানুষটি চলে গেছে তাঁর সাথে বর্তমানের মানুষটির তুলনা রীতিমত অন্যায়।
সঙ্গীকে সমস্যাগুলো বুঝিয়ে বলুনঃ
সঙ্গীর প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকা নিয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন? সমস্যা গুলো বলেই ফেলুন না আপনার সঙ্গীটিকে। কোন বিষয়টি খারাপ লাগছে, কি নিয়ে অশান্তিতে আছেন সব কিছুই বলে ফেলুন তাকে। এই সমস্যায় এক মাত্র তিনিই পারবেন আপনাকে সাহায্য করতে। অন্যদিকে সঙ্গেয়ের যদি এই সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে ভরসা দিন যে সব কথা শোনার জন্য আপনি প্রস্তুত আছেন
বিশ্বাস ও ভালোবাসা দিয়েই গড়ে ওঠে সুখের দাম্পত্য। পুরনো সম্পর্ক তেনে তাকে কলুষিত করার চেষ্টা না করাই ভালো। ভালোবাসা দিন, বিনিময়ে ভালোবাসাই ফিরে পাবেন।
Tidak ada komentar: ঈর্ষা যখন প্রাক্তন প্রেমকে নিয়ে
Posting Komentar