যদি জানতে চাই, পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মল সম্পর্কের নাম কি? জানি, চোখ বুজে সবাই বলবে বন্ধুত্ব! বন্ধু মানে আত্মার আত্মীয়, যে আত্মীয়তা কখনো কখনো রক্তের বন্ধনকেও ছাড়িয়ে যায়। উইকিপিডিয়া বলছে, “বন্ধুত্ব” হচ্ছে দুই অথবা তার অধিক কিছু মানুষের মধ্যে একটি সম্পর্ক যাদের একে অপরের প্রতি পারস্পরিক স্নেহ রয়েছে।” সত্যিই কি শুধু স্নেহ?
বন্ধু জীবনে অক্সিজেনের মতো। যে কথা কাউকে বলা যায় না, সেই গোপন কথার ঝাঁপি নিশ্চিন্তে খুলে দেয়া যায় বন্ধুর সামনে। বন্ধু কখনো শিক্ষক, কখনো সকল দুষ্টুমীর একমাত্র সঙ্গী। বন্ধু মানে বাঁধ ভাঙা উচ্ছাস আর ছেলেমানুষী হুল্লোড়। সব ধরণের মানবিকতা বোধ ছাপিয়ে বন্ধুত্বের আন্তরিকতা জীবনের চলার পথে অন্যতম সম্পদ।
বন্ধুদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিত, সেটা নিয়ে বিভিন্ন রকমের মতভেদ আছে। আছে বন্ধুত্বের রকমফেরও! নিশ্চয়ই ভাবছেন, বন্ধুর আবার রকমফের কি? বন্ধু তো বন্ধুই! একটু দাঁড়ান। আর খানিক সময় থমকে থেকে ভাবুন তো, আপনার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুটির বন্ধু তালিকায় প্রথম নামটিই কি আপনার? সেও কি আপনাকে আপনার মতোই বন্ধু ভাবছে?
সামান্য ভুল বোঝাবুঝি থেকে সহসাই বন্ধুত্বের সম্পর্কে ফাটল ধরতে দেখা যায়! যে ব্যাপারটা সামান্য আলোচনার মাধ্যমেই মিটে যেতো, তাকে বছরের পর বছর মনের মধ্যে পুষে রেখে বন্ধুত্ব নষ্ট হবার দৃষ্টান্তও নিতান্ত স্বল্প নয়। আসুন জেনে নিই বন্ধুত্বকে সফল করার কিছু টিপসঃ
- ভালো শ্রোতা হোন। বন্দুদের আড্ডায় কেবল নিজের কথাগুলোকেই প্রাধান্য দেবেন না। অন্যকেও বলতে দিন। আলোচনায় উৎসাহিত করুন। বন্ধুর সমস্যাগুলো কে গুরুত্ব দিন। বন্ধুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করবেন না। বন্ধু মানেই কেবল আমার সবটুকু কথা তাকে বলে ফেলা নয়! বরং তার কথাগুলোকেও আপন করে নেয়া!
- বন্ধুত্বে বিশ্বাস রাখুন। তৃতীয় কোন পক্ষের বক্তব্যের জের ধরে সম্পর্কে ফাটল ধরাবেন না। মুখোমুখি আলোচনায় বসুন, সরাসরি জানতে চান। প্রয়োজনে তৃতীয় পক্ষকে সামনে রেখে তথ্যের সত্যতা যাচাই করুন। অকারণে দায়ী করবেন না। বন্ধুর কোন কিছু অপছন্দ হলে অন্যের কাছে সমালোচনা না করে সরাসরি বলুন। শুনতে তিক্ত হলেও ফলাফল মধুর হবে।
- বন্ধুত্বে সৎ থাকুন। মিথ্যা তথ্য কিংবা ধারণা দিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়বেন না। আপনি যা সেটাই প্রকাশ করুন। অযথা কৃত্রিমতা বর্জন করে নিজের ব্যাক্তিত্বকে প্রদর্শন করুন। মনের মতো বন্ধু পেতে সততার কোন বিকল্প নেই। সততা প্রিজারভেটিভ ছাড়াই সম্পর্কের বৃক্ষকে সতেজ রাখে।
- বন্ধুত্বকে টাকা-পয়সা, শ্রেণীভেদ, সম্পদ, ক্ষমতা, পদমর্যাদার নিক্তিতে পরিমাপ করবেন না। বন্ধুত্বে অর্থের লেনদেন কে এড়িয়ে চলুন। নিতান্তই অসম্ভব হলে পূর্ব নির্ধারিত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করুন। বন্ধুর অভাব কিংবা সীমাবদ্ধতাকে তার দূর্বলতা ভাববেন না। সামান্য একটু করুণা সুদীর্ঘ বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট। বন্ধুকে করুণা নয়, সম্মান দিন।
- সমালোচনা করুন, তবে কটুক্তি নয়। বন্ধুর সমালোচনা বন্ধুরা করবে নাতো করবে কে? তবে সমালোচনার ভাষা নির্ধারণে সচেতন হোন। একবার ভুল করলে তাকে ছুঁড়ে দেবেন না। শুধরে নিতে উৎসাহ দিন। প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ান। বিনয়ী হোন।
- বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্বকে নির্মল রাখুন। ছেলে মেয়েতে বন্ধুত্ব হয় না, কথাটি অনেকাংশেই ভুল। বন্ধু যদি বিপরীত লিঙ্গের হন, তার অনুভূতির প্রকাশভঙ্গীও কিছুটা আলাদা হবে, এই সত্যকে মেনে নিন, এবং বিষয়টিকে সম্মান করুন। অযথা অস্বস্তির সৃষ্টি করবেন না। দৃষ্টিশোভন দূরত্ব বজায় রাখুন। আপনার আচরণে যেনো তাকে অকারণে বিব্রত হতে না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
- স্যরি বলুন। ছোট্ট একটা স্যরি বিশাল দূরত্বকে এক নিমেষেই দূর করতে পারে। বন্ধুত্বে ইগোকে দূরে সরিয়ে রাখুন। মনে রাখবেন, এই ইগোতে কেবল বন্ধুকেই হারাবেন না, নিজেও হেরে যাবেন।
- বন্ধুত্বকে সময় দিন। নতুন বন্ধুদের পাশাপাশি পুরোনো সম্পর্কগুলোকে ঝালাই করে নিন। দৈনন্দিন ব্যস্ততায় পুরোনো বন্ধুত্বকে হারিয়ে ফেলবেন না যেন! আপনার বন্ধু আর আপনার মাঝখানে কেবল এক মুঠোফোন দূরত্ব। বন্ধুকে মনে করুন, পুরোনো স্মৃতি রোমান্থন করুন।
হাতখানা বাড়িয়ে দেখুন, বন্ধুরা সব পাশেই আছে। চুপিচুপি, লুকিয়ে।
শুভ বন্ধুত্ব।।
Tidak ada komentar: রক্ষা করুন বন্ধুত্ব
Posting Komentar