সম্পর্ক...এই ছোট্ট শব্দটি প্রতিটি মানুষের পুরো জীবন জড়িয়ে থাকে! এই সম্পর্কই আমাদের আঁকড়ে ধরে রাখে একে অন্যের সাথে। এই সম্পর্কের কারণেই জীবন হয়ে বর্ণিল অথবা মুছে যায় জীবনের সব রং। সম্পর্ক যেমন চলার পথকে মসৃণ করে তুলতে পারে, তেমনি করে তুলতে পারে বন্ধুরও! সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েই আসলে মানুষের জীবন।
বলা হয়ে থাকে, রক্তের সম্পর্ক কখনো ছিন্ন করা যায় না! যত সমস্যা, যত কলহই থাকুক না কেন, পরিবার এবং আত্মীয়তার সম্পর্কের বন্ধন সারা জীবনই আমাদের বয়ে যেতে হয়। বিয়ে হলো দুটি নারী ও পুরুষের মাঝে নতুন পরিবার গড়ার সম্পর্ক। বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি হলেও এটি দুটি মানুষকে আজীবনের সম্পর্কে আবদ্ধ করে। বন্ধুত্ব হলো পৃথিবীর পবিত্রতম সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি! বন্ধুত্ব করার জন্য কোনো বয়স লাগে না। শিশুকালের খেলার সাথী থেকে শুরু করে বৃদ্ধকালের মর্নিং ওয়াকের সঙ্গী, যে কেউ চলে আসতে পারে বন্ধুর তালিকায়!
আরেকটি সম্পর্ক আছে, যেটাতে মানুষ জড়ায়, আর তা হলো প্রেম! একজন ছেলে ও একজন মেয়ের মধ্যকার এই সম্পর্কটি আর অন্যসব সম্পর্ক থেকে একেবারেই ভিন্নরকম! এতে নেই কোনো অনিবার্য বন্ধন বা চুক্তি। এতে বিয়ের মতো কোনো দলিল নেই, নেই রক্তের সম্পর্কের মতো কোনো প্রমাণও! এই সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একমাত্র ভিত্তি হলো বিশ্বাস! শুধুমাত্র বিশ্বাসের ওপর ভর করেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আমি তোমাকে ভালোবাসি - এ কথাটির ওপর ভরসা করেই প্রেমিক-প্রেমিকা জীবনের পথে একসাথে এগিয়ে চলেন। শুধুমাত্র মনের টানেই এই সম্পর্ক একসময় পায় পরিণতি।
যদিও প্রেমের সম্পর্ককে আমাদের সমাজ সহজে স্বীকৃতি দিতে চায় না, তবুও এ সম্পর্ক অন্য সম্পর্কগুলোর মতোই দৃঢ় হতে পারে। এ সম্পর্ক ঠুনকো নয়, তবে বেশ নাজুক। অন্য সম্পর্কের মতো এতেও রয়েছে টানাপোড়েন। এই টানাপোড়েন যেন সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে প্রেমিকযুগলকেই!
তৃতীয় পক্ষের আগমন :
যেকোনো সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। প্রেমের সম্পর্কও এই এখতিয়ারের বাইরে নয়। ছোটখাট মনোমালিন্য থেকে শুরু হতে পারে ঝগড়াও! নিজেদের সমস্যা মেটাতে না পেরে আমরা প্রায়ই অন্যের দ্বারস্থ, পরামর্শ বা সাহায্য নিয়ে থাকি। সাধারণত এই তৃতীয় ব্যক্তি এমন কেউ হন, যিনি প্রেমিক এবং প্রেমিকা দুজনকেই চেনেন। হতে পারে তিনি যুগলদের কারো একজনের ভাই, বোন, বন্ধু বা অন্য যে কেউ!
প্রেম খুবই স্পর্শকাতর একটি সম্পর্ক! যেহেতু বিশ্বাস এর ভিত্তি, তাই বিশ্বাসভঙ্গের কোনো কারণ ঘটলেই এই সম্পর্কে ফাটল ধরে। অনেক সময় এই ফাটলের কারণ আমাদের ডেকে আনা তৃতীয়পক্ষরাই হয়ে ওঠেন! যখন কথা আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে একজন মানুষ মাঝখানে থাকেন, তখন কথার পরিবর্তন হয়ে যেতেই পারে! আবার কোনো কোনো সময় কথার ভুল উপস্থাপনও হতে পারে! মোটকথা, তৃতীয়পক্ষের আগমন কোনোভাবেই প্রেমের সম্পর্কের জন্য সুফল বয়ে আনে না।
নিজেই সামলান :
সম্পর্ক বিগড়ে গেলে নিজেই সামাল দেয়ার চেষ্টা করুন! যদি দোষ হয় আপনার সঙ্গীর, তবুও রাগ ভুলে তাঁর সাথে আলোচনা করুন, সমস্যাটা আসলে কোথায়? পরিস্থিত সামলাতে মধ্যস্থতাকারীর সাহায্য নিলে ব্যাপারটা না শুধরে আরো বিগড়ে যেতে পারে! কারণ সম্পর্ক আপনার, সমস্যাও আপনার। তৃতীয়পক্ষ ব্যাপারটা অনুভব ও মূল্যায়ন করতে পারবে, এমন আশা করাটাই ঠিক নয়!
গোপন কথার ভাগিদার :
নিজেদের সম্পর্কের গোপন কোনো কথা কাউকে না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ, তা সে যত ঘনিষ্ঠজনই হোক না কেন! কারণ যাঁকে বলছেন, তাঁর সাথে যে আপনার সম্পর্ক সবসময় ভালো থাকবে, তা তো নয়! তখন সে এই গোপন কথার ফায়দা নিতে পারে। আর যদি বিষয়টা আপনার সঙ্গীর কানে যায়, তাহলে ভরসা হারিয়ে ফেলবেন তাঁর।
সঙ্গীর দুর্নাম :
ঝগড়া হলে আপনার সঙ্গীর নামে যা-তা বলবেন কারো কাছে। এতে মনের ঝাল মিটবে হয়তো, তবে অসম্মানিত হবেন আপনি নিজেই! যাঁর কাছে বলছেন, সে মুখে 'আহা, উহু' করবে ঠিকই, কিন্তু মনে মনে আপনাদের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করবে। আর মানুষটা যদি হয় আপনার সঙ্গীর বন্ধু বা আপনাদের 'কমন' বন্ধু, তাহলে আপনার সঙ্গী ব্যাপারটা জেনেও যেতে পারেন। আর সেক্ষেত্রে সম্পর্কের উন্নতির বদলে অবনতি হওয়াটাই স্বাভাবিক!
পরামর্শ কি খুব প্রয়োজন? :
সম্পর্ক কীভাবে চালাবেন, কী করলে ভালো থাকবে - এসব ব্যাপারে আমরা এর-ওর কাছ থেকে পরামর্শ নিই! অন্যের পরামর্শে নিজের সম্পর্ক কি ঠিকঠাক রাখা যায়? বোধহয় না! আপনার ও আপনার সঙ্গীর সম্পর্ক কেমন ভাবে চলা উচিত, কীভাবে একে অপরকে খুশি রাখবেন, ঝগড়া হলে কীভাবে মিটমাট করবেন, এসব আসলে নিজেদেরই ঠিক করা উচিত! তাই প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কারো কাছ থেকে যেকোনো ধরনের পরামর্শ নেবার আগে কয়েকবার ভাবুন!
Tidak ada komentar: প্রেমের সম্পর্কে যখন চলছে টানাপোড়ন
Posting Komentar