সকলেই তো আর প্রেম করে বিয়ে করেন না। অনেকেরই বিয়ে হয় পারিবারিকভাবে, যাকে আমরা "অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ" বলি। শুনতে খুব সহজ মনে হলেও বিষয়টা আসলে খুব একটা সহজ নয়। অনেকেই হয়তো বিয়ে করার কথা ভাবছেন, কিন্তু পছন্দের সঙ্গী কিভাবে খুঁজবেন বুঝতে পারেন না। আবার খুঁজে পেলেও আপনার সাথে মনের মিল হবে কিনা তা নিয়েও আছে দ্বিধা-দ্বন্দ। জীবনসঙ্গী খোঁজাটা যেন এক বিশাল পরীক্ষা। "অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ" এর জন্য সঠিক জীবন সঙ্গী খুঁজে পেতে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে চেষ্টা করাই ভালো। পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে গেলে খুব বেশি কাঠ-খড় পোড়ানো ছাড়াই মিলবে মনের মানুষের দেখা। আসুন তাহলে জেনে নেয়া যাক জীবন সঙ্গী খোঁজার ধাপ গুলো।
নিজের পছন্দ-অপছন্দ নির্ধারণ করুন
মনে মনে ভেবে নিন আপনি কেমন সঙ্গী চাইছেন। সঙ্গীর পারিবারিক অবস্থা, দেশের বাড়ি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, চাকরী সব মিলিয়ে কেমন সঙ্গী আপনার পছন্দ সেটা মনে মনে ঠিক করে ফেলুন। নিজের পছন্দের সাথে সবসময়েই পরিবারের পছন্দের সামঞ্জস্য রাখুন। তাহলে বিয়ের পরে মানিয়ে নিতে সুবিধা হবে।
পরিচিতদের মধ্যে দেখুন
প্রথমে ভালো করে চিন্তা করে নিন আপনার কাউকে পছন্দ ছিল বা আছে কিনা। অথবা ভালো করে জানা শোনা আছে এমন কাউকে সঙ্গী বানানো যায় কিনা। স্কুল, কলেজ অথবা ভার্সিটির কাউকে পছন্দ থেকে থাকলে তার খোঁজ নিতে পারেন। অথবা কাছের কোনো বন্ধুর সাথেও যদি পছন্দ-অপছন্দ মিলে যায় তাহলে তাকে জীবনসঙ্গী বানানোর কথাও ভেবে দেখতে পারেন।
কাছের মানুষদের বলে রাখুন
আপনার পরিচিতের গন্ডির মধ্যে কাউকে পছন্দ না হলে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব অথবা কলিগদেরকে সঙ্গী খুঁজতে বলে রাখতে পারেন। অনেকেরই জানাশোনার মধ্যে ভালো পাত্র/পাত্রী থাকে। আপনার পছন্দের ধরণের সাথে মিলে গেলে তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারে। লজ্জা পেয়ে কাউকেই কিছু না বললে সঙ্গী যোগাড় করা কষ্টের ব্যাপার হয়ে যাবে। কারণ আপনি কাউকে মুখ ফুটে না বলা পর্যন্ত কেউ জানবে না যে আপনি জীবনসঙ্গী খুঁজছেন।
ম্যারেজ মিডিয়া
পরিচিতদের বলার পরেও যদি সঙ্গীর খোঁজ না মিলে তাহলে ম্যারেজ মিডিয়া গুলোর শরণাপন্ন হতে পারেন। আজকাল অনেক অনলাইন ম্যারেজ মিডিয়া আছে। নিজের পছন্দ অপছন্দ বলে দিলে তারা সেই অনুসারে পাত্র/পাত্রী খুজে দিতে সহায়তা করে এবং তার বিনিময়ে টাকা নেয়। তবে অনেক ভূয়া ম্যারেজ মিডিয়াও আছে এখন। তাই সুনাম আছে এমন কোনো ম্যারেজ মিডিয়ায় যাওয়াই ভালো। নাহলে সঙ্গী খুজতে এসে উল্টা বিপদে পড়তে হতে পারে।
যোগাযোগ করুন
পাত্র/পাত্রীর কাঙ্খিত যোগ্যতা মিলে গেলে যোগাযোগের ঠিকানা নিন। আপনি যদি লাজুক হন তাহলে পরিবারকে বলুন যোগাযোগ করতে। যদি অপর পক্ষেরও সম্মতি পাওয়া যায় তাহলে পাত্র/পাত্রীর ফোন নম্বর নিন এবং দুজন কিছুদিন কথা বলে নেয়ার অনুমতি নিন। পূর্ব পরিচিত হলেও কথাবার্তা বলে নেয়া জরুরী কারণ বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আপনি জীবন সঙ্গীর মাঝে চান, কি পছন্দ, কি অপছন্দ, ভবিষ্যত পরিকল্পনা সব আগেই খোলাখুলি ভাবে আলাপ করে নিন। দুজনেই দুজনের কাছে সমস্যা গুলো খুলে বলে নেবেন। কিছুদিন মেলামেশা করে দেখে নিন সে আপনার মনের মানুষ হওয়ার যোগ্য কিনা।
পছন্দ হয়ে গেলে
সব দিক মিলিয়ে যদি আপনার মন সায় দেয় তাহলে আপনার পরিবারকে সব কিছু জানিয়ে প্রস্তাব পাঠাতে বলুন। এই সময়ে দুই পরিবার কথা বার্তা বলে পরিচিত হবে এবং সব কিছু পছন্দ হলে সামাজিক প্রথা অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে।
পছন্দ না হলে
কিছুদিন কথা বার্তা বলে যদি দেখেন মনের মিল হচ্ছে না তাহলে ভদ্রতার সাথে বলুন যে আপনি আর এগোতে চাইছেন না। কেন পছন্দ হয়নি সেটা খোলাখুলি বলে কারো মনে আঘাত দেয়ার দরকার নেই। বলুন আপনার সাথে মনের মিল হচ্ছে না, তাই আপনার মন সায় দিচ্ছে না। মন সায় না দিলে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্কে না যাওয়াই দুজনের জন্য ভালো।
সিদ্ধান্ত যাই হোক ভেঙ্গে না পরে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন। কারণ জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে কোনো ভুল করে ফেললে সারা জীবন সেই ভুলের মাশুল দিতে হবে।
নিজের পছন্দ হোক কিংবা পারিবারিক পছন্দে, বিয়ের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না মোটেই। বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, আজীবনের বন্ধন। তাই জীবনসঙ্গী এমন একজন মানুষ হতে হবে, যার সাথে আপনার ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া গুলো মেলে। জীবনের পথে দুজনের ভাবনা খাপে খাপে মিলে না গেলে দাম্পত্যে ভালোবাসা খুঁজে পাওয়াটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুখী দাম্পত্যের জন্য অর্থ-বিত্ত বা অন্য কিছুর চাইতে পছন্দের একটি মানুষ সবচাইতে বেশি জরুরী।
Tidak ada komentar: যখন খুঁজছেন জীবনসঙ্গী
Posting Komentar