পিরিয়ড নিয়ে প্রায় সব মহিলাই কম-বেশি অস্বস্তিতে ভোগেন। বিশেষ করে পরীক্ষা, চাকরির ইন্টারভিউ, লম্বা ট্যুর, মঞ্চে অনুষ্ঠান থাকলে পিরিয়ড হলে বেশ অস্বস্তি লাগে। ধর্মীয় শুভ কাজে অংশ নেওয়াও এই সময় বন্ধ হয়ে যায়।একবিংশ শতাব্দিতে লাইফস্টাইল বদলেছে। অনেকেই চান জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে শারীরিক ঝঞ্ঝাট যেন তাড়া না করে। অনেকেই প্রতি মাসে পিরিয়ড হওয়াটা পছন্দ করছেন না। তার চেয়ে যদি তিন চার মাস অন্তর অন্তর পিরিয়ড হয় তবে অনেকটা রেহাই মিলবে। বা ধরুন যে সময় পরীক্ষা, বা ইন্টারভিউ বা অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নেই, ঠিক সেই সময়টা যদি পিরিয়ড হয়ে যায় তো কেমন হয়?
অনেকেই এমনটা মনে মনে ভাবেন, অথচ বাস্তবে হয়ে ওঠে না।
এখানে জানাই, এটা আশ্চর্যের কিছু না। ইচ্ছে থাকলে এমনটা হতেই পারে। মনমতো সময়ে পিরিয়ড হয়ে যাওয়ার এই ব্যাপারটাকে আমরা বলি সিজেনাল পিরিয়ড।
ভুল ধারণা
মুশকিল হল আমাদের দেশে পিরিয়ড নিয়ে অনেক রকম ধারণা রয়েছে। দিদিমা-ঠাকুমাদের আমল থেকে একটা ধারণা রয়েছে যে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যাওয়া শরীরের পক্ষে খারাপ। কারণ মেনস্ট্রুয়াল ব্লাড নাকি দূষিত রক্ত। সেই রক্ত বেরোতে না পারলে মাথায় উঠে পাগল হয়ে যায়। ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব হাস্যকর যুক্তি। কোনও ডাক্তারি বইতে এ বিষয়ে এক লাইন ও লেখা নেই। যাঁরা প্রিম্যানস্ট্রুয়াল সিনড্রোম, বা পিরিয়ড চলাকালীন তলপেটে ব্যথা বা অতিরিক্ত ব্লিডিং-এর সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের চিকিত্সার অঙ্গ হিসেবেই তিন থেকে চার মাস পিরিয়ড বন্ধ করে রাখা হয়। যাতে তাঁরা এই কষ্টটা প্রতি মাসে না পান। তা ছাড়া প্রেগন্যান্সি বা ব্রেস্ট ফিডিং-এর সময়ও আপনাআপনি পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। পিরিয়ড বন্ধ রাখার মধ্যে কোনও নৈতিক সমস্যা নেই।
বাস্তবে দেখেছি, বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার জন্য পিরিয়ড বন্ধ করে রাখতে বললে আজকের আধুনিক মেয়েরাও আঁতকে ওঠেন। যেন তাঁদের কোনও সাংঘাতিক সমস্যার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ পিরিয়ড একেবারে বন্ধ করা বা পিছিয়ে দেওয়া নিয়ে গোটা বিশ্বে বহুদিন গবেষণা চলছে। পিরিয়ড পিছিয়ে দেওয়া এক দম নিরাপদ। যে কোনও প্রজননক্ষম মহিলা স্বল্প সময়ের জন্য পিরিয়ড পিছিয়ে দিতেই পারেন।
কী ভাবে বন্ধ করা হয়
এর জন্য রোজ একটা করে কৃত্রিম প্রোজেস্টেরন হরমোন সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। পিরিয়ড শুরু হয় ন্যাচরাল সাইকেলের দ্বিতীয়ার্ধে প্রোজেস্টেরন কমে এলে। অতএব প্রোজেস্টেরন সাপ্লিমেন্ট যদি দুই সপ্তাহ চালিয়ে যাওয়া হয়, তবে প্রোজেস্টেরন কমে গিয়ে ব্লিডিং হয় না।
কখন বন্ধ করবেন প্রোজেস্টেরন
যখনই মনে করবেন এ বার পিরিয়ড হলে অসুবিধে নেই, তখনই ওষুধ বন্ধ করে দিতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে এই প্রোজেস্টেরন পিরিয়ড শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট দিনের অন্তত সাত দিন আগে চালু করা যায়। এবং সেটা দশ বা পনেরো দিন আগে হলে আরও ভাল। শেষ মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ডের ষোলতম দিন থেকে প্রোজেস্টরন শুরু করা হয়।
সতর্কতা
এই ধরনের চিকিত্সা চলাকালীন একটাই সতর্কবার্তা, এই ওষুধ গর্ভনিরোধক হিসেবে কার্যকরী নয়। তাই ট্যাবলেট শেষ করার সাত দিনের মধ্যে পিরিয়ড শুরু না হলে দ্রুত প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা বাধ্যকামূলক। অথবা এই পিরিয়ড বন্ধ রাখার সময় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের সময় কনডোম জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে হবে।
কন্ট্রাসেপটিভ পিল
পিরিয়ড বন্ধ করতে কন্ট্রাসেপটিভ পিলও ব্যবহার করা হয়। পিল ব্যবহারে পেলভিক ইনফেকশন, সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিস কম হয়। ওভারিয়ান সিস্টের সমস্যাও কমে যায়। ওভারিয়ান ক্যানসারের সম্ভাবনাও কমে যায়। পিল প্রতি মাসে একুশ দিন করে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। পিরিয়ড শুরু হওয়ার পঞ্চম দিন থেকে শুরু করে পঁচিশতম দিন পর্যন্ত পিল খেতে হয়। অথবা পিরিয়ড হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে যে কোনও এক দিন পিল শুরু করে টানা একুশ দিন খেয়ে যেতে হবে। তার পর সাত দিন বন্ধ রাখতে হবে।
এই সময়ের মধ্যে পিরিয়ড হবে।
তবে সাত দিন বন্ধ না রেখে যদি লাগাতার ৮৪ দিন পর্যন্ত পিল খেয়ে যাওয়া হয় অর্থাত্ একুশটা ট্যাবলেটের চারটে প্যাকেট টানা চুরাশি দিন খেয়ে গেলে কোনও ঋতুস্রাব হবে না। এর পর সাত দিনের ছোট গ্যাপ দিয়ে আবার পিল শুরু করতে হবে চুরাশি দিনের জন্য। তাতে প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর পিরিয়ড।
-গৌতম খাস্তগীর
Tidak ada komentar: মেয়েদের পিরিয়ড নিয়ে দু চার কথা
Posting Komentar